শিকলে বাঁধা পড়লো ফরিদগঞ্জের এক হাফেজ

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জমান, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সনন্তানকে প্রকৃত আলেম বা নেক সন্তানের হলে বাবা মা আখেরাতে শান্তিতে থাকবেন এমন চিন্তাতে ছেলেকে কোরআনে হাফেজ বানালেন। মৃত্যুর পর মা-বাবার ইচ্ছে পূরনে সন্তানের ইমামতিতে পড়ানো হবে জানাজার নামাজ, এমন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে নিজের সন্তানকে হাফেজি পড়িয়ে তৈরীও করেছিলেন। আল্লাহর রহমত আর নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় পুরো ত্রিশপাড়া পবিত্র কোরআনের ৬ হাজার ৬শ ৬৬ আয়াত মুখস্থ করে নিজের বুকে ধারণ করেছেন মেধাবী আবদুল খালেক।

আবদুল খালেক হাফেজী শেষ করলেও স্বপ্ন পুরন হয়নি তার বাবা-মায়ের। হাফেজী শেষ করার কয়েক মাসের মাথায় মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১৫ বছর শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে কোরআনের হাফেজ-কে। বর্তমানে অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে দিন দিন তার অবনতি হচ্ছে। আত্মিয় স্বজন, এলাকার বিত্তবান, জনপ্রতিনিধি কেউ খবর নেয় না। সহযোগিতাও নেই।

হাফেজ আবদুল খালেক চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি(পূর্ব)ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।

তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনা মনোযোগী ও মেধাবী ছিলো। হাফেজি পড়া শেষ করারপর কয়েক মাসের মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হারিয়ে ফেলে মানষিক ভারসাম্য। পরিবারের সামর্থ অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু সুস্থ্য হয়নি। বর্তমানে বসতঘরে খুটির সাথে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

মা শামছুন্নাহার জানান, আদরের সন্তান আবদুল খালেকের অসংলগ্ন আচরন, না বলে হারিয়ে যাওয়া ও বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলার কারনে পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য তাকে ঘরে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন মা। গত ১৫ বছর ধরে এ অবস্থাতেই রাখা হয়েছে তাকে।

বুকফাটা আর্তনাদে তিনি বলেন, মানুষ আমার ছেলেকে উত্তক্ত করে। সেও বুঝে না। সে যা-ই হউক, আমার নাড়ি ছেড়া ধন। পিতৃহীন ছেলেকে দু চোখের আড়াল করতে পারি না। আবার অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসাও করানো সম্ভব হয় না। অসতর্কতার কারনে যদি হারিয়ে যায়, তার আচরনের কারনে যদি মানুষ তাকে নির্যাতন করে তা আমি সহ্য করতে পারবো না। মা হয়ে আমি সারারাত ঘুমাতে পারি না। “আমার যক্ষের ধন আমারই পাশে শিকল পরা অবস্থায় রয়েছে”।

আমার স্বামী দিন মজুর ছিলেন, ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সম্পত্তি বিক্রি করে তার চিকিৎসা করো হয়েছে। এখন আর তেমন কিছু নেই। তার বাবা কয়েক বছর আগে মারা যায়। বর্তমানে ঠিকমতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের চিকিৎসা করব কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। মা শামসুন নাহার ছেলের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।

জয় রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া জানান, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। তাকে সুস্থ্য করার জন্য আল্লাহর রহমতের পাশাপাশি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। এখনই জানতে পারলাম। মানসিক ভারসাম্যহীন আবুদল খালেকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *