সিডনির শপিং সেন্টারে অজ্ঞাত ব্যক্তির ছুরি হামলায় ৬ জন নিহত

সিডনি, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সিডনির একটি ব্যস্ত শপিং সেন্টারে শনিবার অজ্ঞাত ব্যক্তির ছুরি হামলায় ৯ মাস বয়সী এক শিশুসহ ছয়জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। খবর এএফপি’র। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, ওই অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী একাধিক লোককে ছুরিকাঘাত করে। হামলাকারীকে খুঁজে বের করা হয় এবং এক নারী পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ওই নারী পুলিশকে একজন জাতীয় বীর হিসাবে সমাদৃত করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে বিস্তীর্ণ ওয়েস্টফিল্ড বন্ডি জংশন মল কমপ্লেক্সে- যেখানে শনিবার বিকেলে হাজার হাজার ক্রেতা ছিল।

নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার কারেন ওয়েব বলেছেন, এ হামলায় পাঁচ নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। এতে আহত এক শিশুর জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। পুলিশ জানায়, হামলাকারী একজন ৪০ বছর বয়সী লোক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাকে এখনও সনাক্ত করা যায়নি। ওয়েব ঘটনাটি সন্ত্রাসবাদের কাজ হতে পারে বলে ধারণা করছেন।নিউ সাউথ ওয়েলস অ্যাম্বুলেন্সের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, আট রোগীকে সিডনির বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শিশুটিকে শহরের শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “তাদের সকলেই আঘাত পেয়েছেন।’ নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ান রাগবি লিগের জার্সি পরা এক ব্যক্তি একটি বড় ছুরি নিয়ে শপিং সেন্টারের চারপাশে দৌড়াচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আতঙ্কের একটি দৃশ্য এভাবে বর্ণনা করেন যে, ক্রেতারা নিরাপত্তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং পুলিশ এলাকাটি নিরাপদ করার চেষ্টা করছে। অনেক লোক দোকানে আশ্রয় নিয়েছে, নিজেদের, তাদের পরিবার এবং ভীত অপরিচিতদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। ঘটনার সময় আয়ুষ সিং নামে এক ব্যক্তি কেন্দ্রের ভিতরে একটি ক্যাফেতে কাজ করছিলেন।

তিনি এএফপিকে বলেন, “আমি আমার সামনে পুরো বিষয়টি দেখেছি। আমি চারপাশে অনেক লোককে দৌড়াতে দেখেছি। এ সময় আমি লোকটিকে ছুরি নিয়ে দৌড়াতে দেখেছি এবং লোকেরা পালিয়ে যাচ্ছিল।” সিং এ ঘটনায় আতঙ্কিত দুই বৃদ্ধ নারীকে সাহায্য করেছিলেন। ঘটনার সময় এরা তার ক্যাফেতে লুকিয়েছিলেন। তিনি তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পান। তারপর দেখেন লোকটি মাটিতে পড়ে আছে। সিং বলেন, “এটি সত্যিই ভীতিকর ছিল। আমি এখানে ছয় বছর ধরে আছি। আমি কখনোই অনিরাপদ বোধ করিনি, কিন্তু এখন আমি ভয় পাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ অপরিচিতদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন- যারা একে অপরকে সাহায্য করেছিল। তিনি নারী পুলিশ ইন্সপেক্টরের প্রশংসা করেন- যিনি অন্যদের রক্ষা করতে নিজে বিপদের দিকে এগিয়ে যান। আলবেনিজ ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে বলেন, ‘‘তিনি অবশ্যই একজন হিরো। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তিনি তার এই কাজের মাধ্যমে অনেকের জীবন রক্ষা করেছেন।” প্রাঞ্জুল বোকারিয়া সবেমাত্র কাজ শেষ করে কিছু কেনাকাটা করছিলেন যখন ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। তিনি কাছাকাছি একটি দোকানে দৌড়ে গিয়ে একটি ঘরে আশ্রয় নেন।

তিনি এএফপিকে বলেন, “এটি ভীতিকর ছিল। কিছু লোক আছে যারা আবেগগতভাবে দুর্বল ছিল- তারা কাঁদছিল।” তিনি অন্যান্য ক্রেতা ও কর্মীদের সাথে একটি জরুরী প্রস্থান ব্যবহার করে পালিয়ে যান। ওই পথ দিয়ে তারা পিছনের রাস্তায় পৌঁছে যায়। তিনি ‘বিশৃঙ্খলা’র একটি দৃশ্য বর্ণনা করেছেন- যেখানে লোকজন দৌড়াচ্ছে এবং পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি বেঁচে আছি। এজন্য ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ রাত নামার সাথে সাথে কয়েক ডজন ভারী সশস্ত্র পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স শপিং কমপ্লেক্সের বাইরে অবস্থান করছে। স্ট্রেচারগুলি হতাহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *