নীলফামারীতে বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

নীলফামারী প্রতিনিধি, মো. শাইখুল ইসলাম সাগর, ২৭ এপ্রিল, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : অনুকুল আবহাওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে নীলফামারীতে। ধান চাষে খ্যাত জেলা সদর এখন সোনালী ধানের সমারোহ। ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষক। এই মৌসুমে জেলায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আর অর্জিত হয়েছে ৮১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রার বোরোর বেশী (অর্জিত) চাষ হয়েছে ৫৩৫ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে বি আর-১৪, উফসি ২৮, ২৯, ৩৩, ৭৪, ৮১ এই জাতের ৩৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর, হাইব্রিট এসিআই-১, ২, ৩ জাতের ২৪ হাজার ৫৬০ হেক্টর, ও সিনজেনটা (হিরা) ১, ২, ৩, ৪ জাতের ২১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা আশা করছেন, চলতি মাসের শেষের দিকে তাদের কাঙ্খিত সোনালী ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ যাবত ১৫ হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক ।

এই ধান ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। দলীয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বøকে নিয়মিতভাবে রোগ ও পোকার আক্রমন সংক্রান্ত পূর্বাভাস জরিপ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এইসব কাজ ছাড়াও জেলায় ১৮৪ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষনিকভাবে কৃষকের জমিতে ফসলের তদারকিসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলার ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বোড়াগাড়ী গ্রামের ধানচাষি শফিকুল ইসলাম জানান, এবার ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। গত বোরো মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ছিলাম। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানও খুব ভালই হয়েছে। প্রতিটি শীষ ক্ষেতে সোনার মত জ্বলছে। বাজারে ভাল দাম পেলে লাভবান হতে পারবো।

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের খামাত পাড়ার ধান চাষি বাবলু চৌধুরি জানান, এবার ১২ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান আছে ৫ বিঘা। বাকী ৭ ব্রি-২৯ জাতের। ভাল ফলনে, এবার স্বপ্ন দেখছি ভাল দামের। আর কিছু দিন পরেই সোনালী ধানের মৌঁ মৌঁ গন্ধে ভরে উঠবে কৃষকের বাড়ীর উঠান।

একই এলাকার বর্গাচাষি আব্দুল মিয়া জানান, প্রতিবেশির নিকট দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাইব্রিট ধানের চাষ করছি। এই দোলায় (মাঠে) আমার মতো ধান কারো ফলে নাই। বিঘায় ২৫ মন ধানের আশা করছি। প্রতিদিন আসি আর ধান কাটার স্বপ্ন দেখি। ধানের বাজার ভাল পেলে বাকী দিনগুলি মোটামুটি ভালই চলে যাবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পোকা মাকড়ের উপদ্রæপ ছাড়াই কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারবে। উপসহাকারী কৃষি কর্মকর্তরা সার্বক্ষনিক কৃষকের মাঝে গিয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। এবার ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। তুলনামুলকভাবে উপসি-২৮, ২৯ জাতের ধানের আবাদ এবার বেশী হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ কমে উফশী জাতের ধানের আবাদ বেড়েছে। মোট উফশির আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর। বেশী ফলন পাওয়ায় কৃষক এখন হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধানের আবাদ বেশী বেশী করছে। আশা করি, এসব ধানে এবারও বাম্পার ফলন হবে। বাজারে ধানের দাম ভাল পেলে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ শতভাগ পুরণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *