নরসিংদী জেলা পর্যায়ে একসঙ্গে শীর্ষ চার পদে নারীর নেতৃত্বদানের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে

নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ১৪ মার্চ, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) :  নরসিংদী জেলায় শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে এখন নারীরা অবস্থান করছেন। জেলা পর্যায়ে একসঙ্গে শীর্ষ চার পদে নারীর নেতৃত্বদানের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসক, জেলা ও দায়রা জজ, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা।

গত ১১ মার্চ  রবিবার নরসিংদী জেলা প্রশাসক হিসেবে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন যোগদানের মধ্য দিয়ে নারী ক্ষমতায়নের ষোল-কলাপূর্ণ হয়। ফলে জেলার সকল শীর্ষ পদে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা এখন গোটা জেলায়। একটি জেলায় রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার, প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে একসঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের পদটিই জেলার শীর্ষ পদ। তাঁরা বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাঁরাই মূলত একটি জেলায় সরকারি কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন এবং জেলায় সব কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। দেশের সব কয়টি জেলার মধ্যে নরসিংদীই একমাত্র জেলা যেখানে এই মুহূর্তে চারটি শীর্ষ স্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চার নারী।

বর্তমানে নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বে আছেন, বেগম ফাতেমা নজীব। তিনি ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল নরসিংদীতে যোগদান করেন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে নরসিংদীর পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করছেন আমেনা বেগম (বিপিএম)। তিনি তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর নরসিংদী ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ পদ সিভিল সার্জন। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে এ পদে আছেন ডা. সুলতানা রাজিয়া। এ ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি চির মহান, চির-কল্যাণকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন। নারী-পুরুষের কোনো এক অংশকে বাদ দিয়ে সামনে এগুনো যাবে না।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছে ও প্রচেষ্টার কারণেই নরসিংদীর শীর্ষ পদগুলোতে নারী কর্মকর্তারা আসীন হয়েছেন। এ ধরনের পদায়ন সব স্তরের নারীদের আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাশীল করে তুলবে। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পালন করতে পারলে নরসিংদী জেলাসহ সারা দেশের নারীরা অনুপ্রাণিত হবে। নারীরা স্বেচ্ছায় অধীর আগ্রহ নিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে এ পেশায় এগিয়ে আসবে।’

পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, এ জেলায় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার, প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য উদাহরণ। এটা নরসিংদীসহ গোটা দেশের নারী সমাজের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নের একটি উদাহরণ।

একইভাবে সিভিল সার্জন ডা. সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘নারী বলে ঘরে বসে থাকার সুযোগ এখন আর নেই। কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। নারী হিসেবে কারো দয়া, দক্ষিণা পাওয়ার আশা না করে নিজের মেধা, পরিশ্রম ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের অর্জন গড়ে তুলতে হবে। নারীরা যে এগিয়ে যাচ্ছে নরসিংদী তাই প্রমাণ করে। আমরা কেউ নারী হিসেবে নয়, যার যার যোগ্যতা দিয়ে এই পদগুলো অলংকৃত করেছি। এতে ভবিষ্যতে নারী কর্মকর্তারা একজন অফিস প্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবেন।’

শীর্ষ পদে নারীর পদায়নকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘নারী ও পুরুষ এখন আর আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি পুরুষের সঙ্গে নারীও সমান তালে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে তার কর্মে স্বাক্ষর রাখছে। নরসিংদীর নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের যোগদান আমাকে আনন্দিত করেছে। কারণ এর মাধ্যমে আমরা জেলার সব শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব পেয়েছি। নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সম মর্যাদায় ও দক্ষতায় প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করছেন।

এরই মধ্যে আমরা বিচার, আইন ও স্বাস্থ্য বিভাগে নারী নেতৃত্বের দক্ষতার ছাপ দেখতে পেয়েছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের সহযোগিতা করা। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী হবে।’ ওই চারজন ছাড়াও নরসিংদীর বিচার বিভাগেও নারীদের প্রাধান্য রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ ছাড়াও অতিরিক্ত যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেগম লুবনা জাহান। মুখ্য বিচারিক হাকিমের দায়িত্ব পালন করছেন শামীমা আফরোজ। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের পদে রয়েছেন শামীমা আক্তার। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আছেন সুষমা সুলতানা, শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  হিসেবে আছেন শিলু রায় ও বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন উম্মে হাবিবা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে আছেন লুবনা ফারজানা, নাহিদা পারভীন, সহকারী কমিশনার হিসেবে আছেন জাকিয়া সুলতানা, রাবেয়া আক্তার, মেহের নিগার সুলতানা ও তাহমিনা আক্তার।

জেলা পর্যায়ে অন্যান্য নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জেবুন্নাহার পারভীন, জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক সাইদা নাজমুন্নাহার, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার, জেলা তথ্য কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার সাথী এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা  এস. এম. রেখা রাণী হালদার। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *