ঝিনাইদহে ব্যঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকে চলছে অনভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের ভেল্কিবাজী!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ২৭ মার্চ ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : ঝিনাইদহে ব্যঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিকে চলছে অনভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের ভেল্কিবাজী! জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যঙের ছাতার মতো একের পর এক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপচিকিৎসা চলছে। অপচিকিৎসা ও অবহেলায় প্রায়শই রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। এসব ঘটনায় হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। তালা ঝুলিয়েও দেওয়া হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ২৮টি, মহেশপুর উপজেলায় ১৩টি, শৈলকুপা উপজেলায় ৭টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৭টি ও হরিণাকুন্ড উপজেলায় ৬টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। আর জেলায় ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি আছে ৭৭টি।

সরকারি নিয়ম আছে, হাসপাতালে সর্বক্ষণ পালাক্রমে ডিউটি করার জন্য তিনজন ডাক্তার, ছয়জন ডিপ্লোমা পাস নার্স ও ছয়জন প্রশিক্ষিত আয়া থাকতে হবে। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া কোনো হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স নেই। থাকতে হবে এসিসহ যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত অপারেশন থিয়েটার। অনেক হাসপাতালে তা নেই। নেই ইনকিউবেটর।

রোগী ও বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনা করছেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী ভর্তির পর অপারেশনের প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে ডাক্তার এনে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের আগে একজন অজ্ঞানকারী ডাক্তার রোগীকে অজ্ঞান করবেন এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অপারেশন করবেন।

এ বিষয়ে রোগীদের অভিযোগ, সাধারণ এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার স্পাইনাল কডে ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করেন। বিশেষজ্ঞ নন এমন ডাক্তাররা দেদারছে অপারেশন করে যাচ্ছেন। ডাক্তাররা অপারেশন করে চলে যান। তারপর রোগীর চিকিৎসা দেন ভুয়া নার্স বা আয়া। নার্সিংয়ে অনভিজ্ঞ মহিলাদের অ্যাপ্রোন পরিয়ে নার্স সাজিয়ে রাখা হয়।

আয়াদেরও কোনো প্রশিক্ষণ নেই। ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতেও নানা অব্যবস্থাপনা আছে। অধিকাংশগুলোতে পাস করা ফার্মাসিস্ট নেই। অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা বাজারে জননী নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে অপচিকিৎসায় আটজন প্রসূতি ও এক যুবকের মুত্যু হয়।

জননী প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় দুইজন ডাক্তারকে শাস্তিমূলক বদলিও করা হয়। বাতিল করা হয় হাসপাতালের লাইসেন্স। এর বেশি আর কিছু করা হয়নি। অপচিকিৎসার অভিযোগে এ বছর মহেশপুরে ফাতেমা, মোমেনা ও আব্দুল অজিজ প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কালীগঞ্জে হাসনা ক্লিনিক। এ উপজেলায় আরো দুইটি প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধের জন্য ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লেখা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, হাতে গোনা দুই-একটি ছাড়া কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল সকল নিয়ম মেনে চালানো হচ্ছে না। লোকবলের অভাবে যথাযথভাবে পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। পরিদর্শনে গেলে সেদিন ডাক্তার নার্স এনে রাখা হয়।

অবহেলা বা অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে তদন্ত করে হাসপাতাল বা ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়। অব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *