ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৩ তম বিশ্ব ইজতেমার ২য় পর্ব শুরু, দেশী-বিদেশী লাখো মুসুল্লিদের ঢল
গাজীপুর, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে টঙ্গীর তুরাগ তীরে মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৩ তম বিশ্ব ইজতেমার ২০১৮-র ২য় পর্ব শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। ইজতেমা উপলক্ষে তাবলীগ জামাতের দেশী-বিদেশী লাখো মুসল্লির ঢল যাচ্ছে তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দানে। ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় শরীক হচ্ছেন ঢাকা জেলার আংশিকসহ ১৪ জেলার মুসল্লিরা। তাদের সঙ্গে দুই ধাপেই শতাধিক দেশের তাবলীগের বিদেশী মেহমান অংশ নিচ্ছেন। আগামী ২১ জানুয়ারী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব।
ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে থাকছে বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস। নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে ৮ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ব ইজতেমার পুরো ময়দান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ইজতেমায় বিদেশী নিবাসে আছেন ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশের ৫ হাজারের বেশি মুসুল্লি। বিদেশী নিবাসে গ্যাস সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে আলাদা স্বাস্থ্য ক্যাম্প। তাবলীগের বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় থাকা আর ইজতেমার দাওয়াতের কাজে যারা ছিলেন সেসব মুসল্লিরাও দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসছেন। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনা আর অযু, গোসলখানা ও নিরাপত্তাসহ সব ধরনের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট তারা।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, হামদর্দ, যমুনা ব্যাংক, র্যাব, ইমাম সমিতি, গ্রামীণফোন ও রবি, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, ইন্টার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ড. এ আর খান ফাউন্ডেশন, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পর্ষদ (স্বাচিপ)সহ অর্ধশত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল ক্যাম্প ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। এছাড়াও ইজতেমা ময়দানে টঙ্গী প্রেসক্লাবের মিডিয়া সেন্টার চালু রয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) কে এম রাহাতুল ইসলাম জানান, সিটি কর্পোরেশন দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমায়ও আগত মুসল্লিদের ২৪ ঘন্টা সেবা দিচ্ছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন- অর- রশীদ বলেন, দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমায় প্রায় ৬ হাজারের মতো পুলিশ নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি খিত্তায় ৬জন করে সাদা পোশাকে পুলিশ অবস্থান করবে। ইজতেমায় সার্বিকভাবে সফল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েনসহ পুরো ময়দান সিসি টিভি ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইজতেমার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ইজতেমায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিরা অবস্থান করছেন। আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা বিধান করা।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা জেলার খিত্তা নং-১ হইতে ১০ এবং ১৮ ও ১৯), জামালপুর জেলার খিত্তা নং-১১ ও ১২, ফরিদপুর জেলার খিত্তা নং-১৩, ফরিদপুর জেলার খিত্তা নং-১৪, ঝিনাইদহ জেলার খিত্তা নং-১৫, ফেনী জেলার খিত্তা নং-১৬, সুনামগঞ্জ জেলার খিত্তা নং-১৭, চুয়াডাঙ্গা জেলার খিত্তা নং-২০, কুমিল্লা জেলার খিত্তা নং-২১ ও ২২, রাজশাহী জেলার খিত্তা নং-২৩ ও ২৪, খুলনা জেলার খিত্তা নং-২৫ ও ২৭, ঠাকুরগাঁও জেলার খিত্তা নং-২৬ এবং পিরোজপুর জেলার খিত্তা নং-২৮। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের উত্তর দিক থেকে ক্রমানুসারে দক্ষিণ দিকে খিত্তার নম্বর বসানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রনকক্ষ সূত্রে জানা যায়, ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশ এলাকায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ২টি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বুধবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বিশ্ব ইজতেমায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজ মাঠ, উত্তরার আজমপুর স্কুল মাঠ, কামারপাড়ায় রানাভোলা মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।