বিশ্বে টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা, ০৮ জুলাই, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) :  প্রতিযোগিতায় বিশ্বে টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকেও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুতে হবে। আমরা সেভাবেই আমাদের শিশু-কিশোরদের গড়ে তুলতে চাই এবং শিক্ষাই তাদের বিকাশের একমাত্র চাবিকাঠি। দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত ও সমৃদ্ধভাবে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার হলো শিক্ষা। কেউ যদি শিক্ষিত হয় তাহলে যেকোন প্রতিকূল পরিবেশে সে টিকে থাকতে পারে। সবাইকে একটা কথাই বলবো, শিক্ষাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু না। এই সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, ছিনতাই করতে পারবে না। শিক্ষাটা যদি থাকে জীবনটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছি, যার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে নেটওয়ার্কটা চালু হবে। সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র যোগাযোগ স্থাপনে আমাদের স্যাটেলাইট কাজ করবে। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যসেবায় সব কিছুতেই অবদান রাখতে পারবে। সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে, আরো জটিল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির সন্নিবেশ ঘটাচ্ছে, যেগুলো চালাতে ভবিষ্যতে অনেক দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। আজকের শিশুরাই একদিন সবকিছু পরিচালনা করবে। সেই সুযোগটাই আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। শিক্ষাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর এই শিক্ষাটাই তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা তাদের সন্তানদের দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এবং রেহানা আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা কথাই বলি, একটাই সম্পদ সেটা হচ্ছে শিক্ষা। তোমরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা এতো মেধাবী, আমি মনে করি, বিশ্বে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি মেধাবী। আমাদের ছেলেমেয়েদের একটু সুযোগ করে দিলে তারা অত্যন্ত ভালো করে। আমাদের ছেলেমেয়েদের আমরা সেভাবেই গড়তে চাই যেন আগামী দিনে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে থাকে। দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় গিয়ে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। গ্রাম বাংলায় সোনার টুকরো ছড়িয়ে আছে। আমরা সেই সোনার টুকরোগুলো খুঁজে বের করছি। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছি। সরকার বিজ্ঞান, কারিগরি শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করছে।

তিনি এ সময় প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান, মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। আর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাটাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা) কাজী কেরামত আলী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।

সরকার ২০১৩ সাল থেকে দেশের সকল বিভাগের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এই মেধা অন্বেষণ কর্মসূচি শুরু করে। তিনটি বিভাগে- ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী, নবম থেকে দশম শ্রেণী এবং একাদ্বশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত এবং কম্পিউটার- চারটি বিষয়ে দেশের সকল বিভাগ ও জেলা পর্যায় থেকে নির্বাচিত শীর্ষ ১০৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্বাচিত ১২ জনকে এদিন ‘মেধা অন্বেষণ-২০১৮’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে একটি ট্রফি, এক লাখ টাকার বৃত্তি এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।

জাতীয় পর্যায়ের সেরা ১২ মেধাবী শিক্ষার্থী ৯ জুলাই পাঁচদিনের শিক্ষা সফরে তুরস্ক যাবেন বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাকি ৯৬ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককেও পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা এবং সনদপত্র প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবীদের দেশে বিদেশে কাজের সুযোগ করে দেয়া হবে। যাতে তারা নিজেদের মেধা মননের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন।  আমি এইটুকু আশা করবো যে, আমাদের ছাত্ররা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে। দেশের জন্য কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি কুদরত-ই-খোদা কমিশন গঠন করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবদিক থেকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। পঁচাত্তরের পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। তারা বরং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *