রাজারহাটে ২মাস বন্ধ থাকার পর আবারো ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, প্রশাসন নিরব
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ৩০ মার্চ, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদীতে ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে তিনটি গ্রাম হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পরেছে। প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস পূর্বে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ যোবায়ের হোসেন যত্রতত্র ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন আইনত অবৈধ হওয়ার কারন দেখিয়ে ৮/১০টি ড্রেজার মেশিন ও সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে দেন। এরপর থেকে উপজেলার ৭ইউনিয়নের ২৫টি ড্রেজার মেশিন বন্ধ পরে রয়েছে। এছাড়া বৈধ পন্থায় বালু উত্তোলনের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে উপজেলার ৯টি স্থানে বালু মহাল স্থাপনের অনুমতির লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করা হয়। সেসময় ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় একটি দালাল চক্র ব্যবসা পূনঃরায় চালাতে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজের কথা বলে একাধিক ড্রেজার মালিকের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ও মাসোহারা দাবীর গুঞ্জন উঠে। ড্রেজার মালিকরা এই অনৈতিক দাবী পূরনে রাজী হয়নি।
এদিকে গত এক সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি নামক স্থানে তিস্তা নদীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে পার্শ্ববর্তী কাউনিয়া উপজেলার বাহাদুর আলী, শাহআলী ও খোকা মিয়ার ৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু হয়। দেখে মনে হয়, যেন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগীতা চলছে। কিছুদূর পরপর সারিবদ্ধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিবারাত্রি বালু উত্তোলনের ফলে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন কবলিত সরিষাবাড়ি, বগুড়াপাড়া ও ডাবুর বাজার নামক তিনটি গ্রাম হুমকীর সম্মূখীন হয়ে পরেছে।
এছাড়া রাজারহাট সদরের পূনঃকর গ্রামেও একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনরাত ২৪ঘন্টা বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। তবে নতুন করে বহিরাগত ড্রেজার এনে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসন এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ড্রেজার মালিক বলেন, দালালদের দাবীকৃত অর্থ ও মাসোহারা দিতে পারি নাই বলে আমরা বসে আছি।
উপজেলার রাজারহাট সদরের হরিশ্বর তালুক গ্রামের ড্রেজার মালিক ফুলচাঁদ বলেন, এরআগে আমার ভাতিজা নুরনবী ও বাবলুর ৩টি ড্রেজারের সরঞ্জামাদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরমধ্যে বাবলুর ড্রেজার মেশিনটি দিয়ে কোন বালু উত্তোলন না করা সত্বেও সেটি পোড়ানো হয়েছিল। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করে সব মেশিনগুলো বন্ধ রেখেছি। অথচ এখন বহিরাগত ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে।
উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গার ড্রেজার মালিক রুম্মান সহ একাধিক ড্রেজার মালিক জানান, আমাদের ড্রেজার মেশিন ২মাস ধরে বন্ধ, কিন্তু বহিরাগতদের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে। ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের সরিষাবাড়ির ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, আমি জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজন বালুর অভাবে ঘরবাড়ি তৈরীর কাজ করতে পারছে না তাই একটু সহযোগীতা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ যোবায়ের হোসেন জানান,ব্যস্ততার কারণে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি।