৭ দিনেও খোঁজ মেলেনি কালীগঞ্জের চার সদস্যের হিন্দু পরিবারের, পূজা উদযাপন পরিষদের গনআন্দোলনের হুমকী
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ১১ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পারখালকুলা থেকে নিখোঁজ হওয়া চার সদস্যের হিন্দু পরিবারটির ৭ দিনেও খোঁজ মেলেনি। আত্মীয় স্বজন ও প্রশাসনের লোকজন তাদের কোথাও খুজে পাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির অত্যাচারে তিনি ঘরবাড়ি ফেলে পালিয়েছেন। হিন্দু পরিবারটির শুন্য ভিটা এখন খা খা করছে। ভয়ে ওই জনপ্রতিনিধির নাম প্রকাশ করছে না।
এদিকে কালীগঞ্জের সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান পরিবারটির খোঁজ নিয়ে ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবী জানান। জানা গেছে, গত (৪ মে) শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ হওয়া এই পরিবার প্রধানের নাম সুকুমার বিশ্বাস। পরিবারটির অন্য সদস্যরা হলেন সুকুমার বিশ্বাসের স্ত্রী রেনু রানি বিশ্বাস, পুত্রবধূ রিপা রানি বিশ্বাস এবং দৌহিত্র সনদ বিশ্বাস।
পরিবারটি নিখোঁজের পর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হিন্দু নেতাদের বক্তব্য পরিবারটিকে কেও হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সুনীল ঘোষ সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সুকুমার বিশ্বাসের পানের বরজসহ আট বিঘা সম্পত্তি দখলের জন্য প্রভাবিশালী একটি মহল তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।
ফলে তাদের এই নিখোঁজের পেছনে স্থানীয় এসব ভূমিদস্যুর যোগসূত্র থাকতে পারে। তিনি নিখোঁজ পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিজ বাড়িতে বসবাসের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। না হলে গণআন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সুকুমার বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সব ঘর তালাবদ্ধ। গোয়ালে একটি গাভী রয়েছে।
আমিরুল জোয়ার্দার নামে এক প্রতিবেশী সাংবাদিকদের জানান, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এসে সুকুমারের রেখে যাওয়া গরু এবং হাঁস-মুরগি দেখভালের দায়িত্ব তাকে দিয়েছেন।’ তিনি আরো জানান, কয়েকদিন আগে সুকুমার শ্বশুরবাড়ি যশোরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যান। এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সুকুমারের স্ত্রী, পুত্রবধূ ও দৌহিত্র প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে আর ফিরে আসেন নি।
নিখোঁজ সুকুমারের জামাই অলোক কুমার বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি আমার শ্বশুর যশোরে এক বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এরপর থেকে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর বাড়ির অন্য সদস্যরা চলে যায়। তবে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার দুইদিন পর আমার সাথে একবার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। তখন আমাকে জানিয়েছিল, তারা দেশেই আছেন। তবে নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে আছেন।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার পর বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। পুলিশের বিশেষ একটি টিম এই বিষয়ে কাজ করছে। তাদের স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ যদি নির্যাতন করে তাহলে পুলিশকে অবহিত করতে পারতো। কিন্তু তা না করেনি। তিনি বলেন আমরা পরিবারটির অবস্থান জানার চেষ্টা করছি। হিন্দু পরিবারটির খোঁজ না পাওয়ায় কালীগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ নেতাদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।