সাইবার অপরাধ বন্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ শিরোনামে, সংশোধীত সাইবার অপরাধ বন্ধে আরো কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেছে। খসড়ায় বলা হয়, আইনটি প্রণীত হলে সাইবার অপরাধ থেকে দেশের স্পর্শকাতর তথ্য অবকাঠামো (সিআইআই) রক্ষা পাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ বন্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট-২০১৮ প্রণীত হয়েছে। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রিয় ব্যাংকসহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। সাইবার অপরাধের বিভিন্ন দিক প্রচলিত আইনের আওতায় না পড়ায় আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
শফিউল আলম বলেন, ইলেক্ট্রিকেল, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক, অপটিকেল, বায়োমেট্রিক, ইলেক্ট্রোকেমিকেল, ইলেক্ট্রোমেকানিকেল, ওয়ারলেস ইলেক্ট্রোমেকানিকেল টেকনোলজি প্রস্তাবিত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সকল বিষয় ব্যবহার করে অপরাধ করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভা সংধিানের (১৭তম সংশোধনী) আইন-২০১৮ এর খষড়া অনুমোদন করেছে। সংবিধানের প্রস্তাবিত খসড়ায় ১১তম সংসদ থেকে ২৫ বছরের জন্য সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার রোসাটম, বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ভারতের পারমানবিক শক্তি বিভাগের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া সর্বসম্মতক্রমে অনুমোদন করা হয়।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৮ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে আইসিটি আইন- ২০০৬ এর আর্টিকেল ৫৪,৫৫,৫৬,৫৭ এবং ৬৬ বিলুপ্ত ও অপরাধ সংঘটনের ধরন বিবেচনা করে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খসড়ায় সেকশন ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮এর অধীন আমলযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে, এমন ১৪ ধরনের অপরধ সনাক্ত করতে অভিযোগ তদন্তের প্রক্রিয়া সুনিদিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেকশন ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ এর অধিনে সংঘটিত অপরাধ জামিন অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। খসড়ায় কোন সরকারি, আধা সরকারি অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার যে কোন ধরনের গোপন তথ্য সংগ্রহ, অথবা প্রকাশ অথবা সংরক্ষনের জন্য সবোর্চ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড পাশাপাশি ২৫ লাখ টাকা জরিমানর বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সচিব বলেন, খসড়ায় রাষ্ট্রীয় সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম পর্যালোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনে সার্বক্ষণিক কাজ করতে মহাপরিচালকের (ডিজি) নেতৃত্বে একটি ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিকে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যে কোন ধরনের বিষয় অপসারণ অথবা বন্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটিকে অনুরোধ জানাতে কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ এর অধিন যে কোন অপরাধ আইনের ১৭ থেকে ৩৮ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানা করা হবে। খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মিডিয়ায় কোন অপপ্রচার, বক্তব্য অথবা প্রচারনা চালালে এবং দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌতের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করলে ১৪ বছরের কারাদন্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোন ব্যাক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ইন্টারনেটে কোন পোস্ট দিলে তার জন্য ১০ বছরের কারাদন্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনে ওয়েবসাইটে অথবা কোন ডিজিটাল ডিভাইসে এমন কিছু প্রকাশ করা হলে এ অপরাধে তিন বছরের কারাদন্ড অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।