ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
নীলফামারী প্রতিনিধি, মো. শাইখুল ইসলাম সাগর, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় টি, আর, কাবিখার, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পিআইও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। অনেক প্রকল্প থাকলেও পায়নি প্রকল্পের কোনো অর্থ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা। কেউ কেউ প্রকল্পের টাকা পেয়েছে অর্ধেক। আর কিছু কিছু প্রকল্প আছে কাগজে কিন্তু বাস্তবে নেই। প্রকল্পের সভাপতিরা ডিও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বরাদ্দের টাকা পাচ্ছে না ঠিকমত।
গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের সরকারের উন্নয়নকৃত মসজিদ, মন্দির, রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল, এতিম খানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টি আর ও কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়। সরেজমিন গিয়ে ডোমারের বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় এসব অনিয়মের চিত্র। হরিনচড়া ইউনিয়নের খাটুরিয়া উওরপাড়া ফোরকানীয়া মাদ্রাসা সংস্কার ও উন্নয়নের ৪৩,৫০০ টাকা এবং পাংগামটুকপুর ইউনিয়নের পূর্ব মেলা পাংগা ফোকানীয়া মাদ্রাসা সংস্কার ৮৭,০০০ টাকার প্রকল্পের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অস্তিত্ব নাই মর্মে হরিণচড়া ইউনিয়নের সচিব হামিদুর রহমান একটি প্রত্যয়ন দিয়েছেন যাহা সংযুক্ত আছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ডোমারের বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বটতলি মিস্ত্রি পাড়ায় গোদা রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির সংস্কারের জন্য ৪৩,৫০০ টাকা বরাদ্দ পেলেও প্রকল্প সভাপতি গোদা রায় পায় মাত্র ১০ হাজার টাকা। গোদা রায় বলেন, আমাদের মন্দির সংস্কারের জন্য এলাকার মানিক রায় আমাকে পিআইও অফিসে নিয়ে গিয়ে সই দিয়ে ২০ হাজার টাকা দেয় ওই টাকার মধ্যে সে আবার ১০ হাজার টাকা নেয়, আমাকে দেয় ১০ হাজার টাকা। আমাকে দেওয়া ১০ হাজার টাকা দিয়ে আবার সে নিজের বাড়ীর কাছে মন্দির সংস্কারে কাজে লাগায় আমাদের মন্দিরের কাজ করতে দেয়নি।
একই প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার সাবু রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির ও হিরম্ব কুমারের বাড়ীর নিকট কালী মন্দির সংস্কারে ঘটেছে একই ঘটনা। সাবু রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির সংস্কারের প্রকল্পের সভাপতি সাবু চন্দ্রের স্ত্রী শ্যামলী রায় বলেন, উপজেলায় ২০ হাজার টাকা দিছে তার মধ্যে ১০ হাজার টাকা পিআইও অফিসে নিছে আর ১০ হাজার টাকা আমার স্বামীকে দিছে।
ওই এলাকার মানিক এর বাড়ীর নিকট কালী মন্দির সংস্কারের জন্য ৪৩,৫০০ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই এলাকার কবিতা রাণী ও রাম প্রসাত রায় জানান আমরা সরকার থেকে মন্দিরের জন্য কোনো টাকা পাই নি। ৭নং ওয়ার্ডের মটুকপুর বারোগোলা দূর্গাকালীমন্দির ঘর সংস্কার ৪৯,০০০ টাকার কোন বরাদ্ধ পাইনি অভিযোগ করে বলেন উক্ত মন্দিরের সেবায়েত ও ইউনিয়ন সরদার সুদীর চন্দ্র রায়।
টি, আর নগদ অর্থ প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার বটতলি বুড়ার ডাঙ্গা জামে মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু ওই মসজিদের মুসল্লি নুর ইসলাম, ঝুমর আলী জানান বরাদ্দ পেয়েছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এবিষয়ে ওই মসজিদের কোষাধ্যক্ষ স্বপন বলেন, বরাদ্দের টাকা দিয়েছে ৯ হাজার আর এক হাজার টাকা খরচ মোট ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ। প্রকল্পের সভাপতি মানিক ইসলাম মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, মসজিদের বরাদ্দ পেয়েছি ৪০ হাজার টাকা।
বটতলি জামে মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৩,৫০০ টাকা কিন্তু ওই মসজিদের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, মসজিদ সংস্কারের জন্য আমরা সরকার থেকে কোনো টাকা পাইনি।
সোনারায় ইউনিয়নের বড়াগাছা লাইন পাড়া সার্বজনিন হরিমরিন্দর সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পেলেও মন্দিরের সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায় জানান, আমার মন্দিরের কাজের জন্য সরকার থেকে কোনো টাকা পাইনি, মন্দির জরাজৃর্ন অবস্থায় পড়ে আছে তাই আমরা টাকার অভাবে কোনো কাজ করতে পারিনি।
শুধুমাত্র টি আর প্রকল্পে নয় একই অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পে আটিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট ও সংস্কার হয়েছে নামমাত্র অভিযোগ এলাকাবাসীর। মাঠে মাটি ভরাট করার কথা ৫০ টলি থাকলেও মাটি ভরাট হয়েছে ১২ টলি। এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেয়াতুল আলম জানান, পিআইও অফিসে আমাদের তো গম দেয়নি। পিআইও অফিস আমাকে ডিও ব্যবসায়ী মশিয়ার ও সফিয়ার কে দেখাইয়া দেয়। তারা আমাকে টন প্রতি ১৭ হাজার করে ১০ টনে মোট ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা দেয় এবং পিআইও অফিস খরচ বাবদ নেয় ২৩ হাজার টাকা এবং বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নিয়োজখানা স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে মাটি ভরাট সংস্কার ও উন্নয়নের ১০ মেট্রিক টন গমের বরাদ্ধের কোন কাজ হয়নি। এছাড়াও এাণের ব্রীজ, এইচ বিবি রাস্তা, নন ওয়েজ কষ্ট এর কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেন এলাকাবাসি।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি একটি হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আইনি ঝামেলায় পড়ে প্রকল্প গুলো সঠিক তদারকি ও বরাদ্ধ ছাড় পত্রে তেমন কোন সর্তকতা অবলম্বন না করায় সঠিক তদারকি করতে পারিনি এবং ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি কৌশলে এরিয়ে যান।
ভুয়া প্রকল্প, অনিয়ম ও পিআইও”র বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সবনাম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করব।