বঙ্গবন্ধু অধিকার আদায়ের জন্য জেল-জুলুম সহ্য করেছেন-আ.ক.ম মোজাম্মেল হক
কুমিল্লা প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ০১ অক্টোবর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত যে ক’জন নেতা আছেন, তাদের মধ্যে কেউ একটি রাষ্ট্র তৈরী করার স্বপ্ন দেখেছেন। পরবর্তী প্রজন্ম সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন, পরে কেউ না কেউ এসে তা বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তুু পৃথিবীর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র নেতা, যিনি ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের স্বপ্ন দেখেন। ৬ দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চের ভাষনের মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছেন।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই ২৪ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য অনেক অন্যায়-অবিচার, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। কিন্তুু দুঃখের বিষয়, মাত্র সাড়ে ৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার পর ঘাতকরা স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মাঠে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া) আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাসেম খান, শ্রম ও আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এম ফারুক, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হানিফ সরকার, মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুন আল রশীদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজীব, সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, আফজালুন্নেছা বাসেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তমাল, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানোয়ারা বেগম লুনা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল, জেলা পরিষদের সদস্য ভিপি জাকির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ওমর ফারুক সরকার, বণ কুমার শিব, শরিফুল ইসলাম, আবু মুছা সরকার, হাজী কামাল উদ্দিন, কাজী আবুল খায়ের, রুহুল আমিন, কাইয়ুম ভুইয়া, সফিকুল ইসলাম, আব্দুস ছামাদ মাঝি ও জাকির হোসেন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারনেই আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একটি স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছি। তাঁর ডাকে যারা স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারাই আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা। জয় বাংলা আমাদের দলীয় শ্লোগান নয়, এই শ্লোগান মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান। জয় বাংলা শ্লোগানের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তারই ধরাবাহিকতায় ঘরহীন মানুষেরা এখন ঘর পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দেশের সব কয়টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার প্রমাণ স্বরুপ মুরাদনগর, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম ও সদর দক্ষিণে আজ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নব-নির্মিত ভবন উদ্বোধন করা হলো। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আগে ১৪ হাজার ঘর দেওয়া হয়েছে, এখন আরো ৩০ হাজার ঘর দেওয়া হচ্ছে। অচিরেই সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি বলেন, ২০০৮ সাল, আর ২০২১ সাল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের উদ্বৃতি বলেন, স্বল্পন্নোত দেশ বাংলাদেশ, এ দেশ কিভাবে এত এগিয়ে যায় তা নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা গবেষনা করেছেন। তারা বলছেন এ ভাবে এগিয়ে গেলে আগামী ১০ বছর পর অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান হবে বিশ্বের ২৫তম স্থানে।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা এখনো ছোবল দেওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে। তারা দেশে বিদেশে থেকে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ পেলেই যে কোন মুহুর্তে আবারো ষড়যন্ত্র করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাসেম খান এমপি বলেন, ৩০ লক্ষ মানুষের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন, ঘাতকরা সে স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। তারা ভেবে ছিল বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেললে দেশের অগ্রযাত্রা স্তম্ভিত হয়ে যাবে। কিন্তুু শেখ হাসিনা ঘাতকদের সে স্বপ্নকে ধুলিস্যাত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুরুতিতে এ দেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত হয়েছে।