পাঁচবিবিতে জমে উঠেছে ভাপা পিঠার ব্যবসা
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি, আল জাবরি, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : শীত আসলেই মনে পড়ে শীতের হরেক রকম মুখরোচক পিঠার কথা। বর্তমানে শীতের জনপ্রিয় পিঠা ভাপা পিঠা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হিমেল হাওয়ার প্রভাবে বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। শীতের শুরুতে গোধূলী বেলায় হালকা কুয়াশা নেমে আসতে না আসতেই শহরের রাস্তার ধারে সব ধরনের পিঠা বানানোর আয়োজন শুরু করে দেন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা।
ছোট্ট চুলায় মাটির পাতিলে পানি ভরে মুখ লেপে ছোট করে তার ওপর পাতলা কাপড়ের আস্তরণ দিয়ে বসে পড়েন পিঠার কারিগর। পাতলা কাপড়ে মুড়ে পাতিলের ওপর বসিয়ে আগুনের তাপে পানির বাষ্প উঠে তৈরি হয় ভাপা পিঠা ।
কনকনে শীতের, গনকুয়াশা, বাজারে, রাস্তার মোড়ে জ্বলন্ত চুলুর পাশে বসে বা দাড়িয়ে ভাপা পিঠা খাওয়ার আসর বসবে না, তা কি হয় ! তাই তো শীতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবির গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাট বাজার সহ উপজেলা সদরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে জমে উঠেছে ভাপা পিঠা বিক্রির আসর।
এছাড়া বিভিন্ন হাট বাজারে, রাস্তার মোড়ে, পাকা রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান ঘুরতে দেখা যায়। মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় এই পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। প্রতিদিন সন্ধা থেকে রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা। কারণ শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার যে স্বাদ সেটা অন্য কোন সময় পাওয়া যায় না।
আর শীতে যত রকমেরই পিঠা তৈরি হোক না কেন ভাপা পিঠার সাথে অন্য কোন পিঠার তুলনাই হয় না। এই পিঠা বিক্রি করেই শীতের সময় অনেকে সংসার চালান। গ্রামের হাট বাজার গুলির বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মৌসুমী এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন।
তেমন একটা পুঁজি লাগে না বলে সহজেই এ ব্যবসা শুরুকরা যায়। তাই তো অনেকেই মৌসুমী ব্যবসা হিসাবে এটা বেচে নেন। এছাড়া এসব দোকানগুলোতে দেখা যায় পিঠা পাগল লোকজনদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারাও আনন্দেও সাথে ভাপা পিঠা বিক্রি করে থাকে। টিএনটি পাড়া, তিনমাথা,পাঁচমাথা, ১নং রেলগেট, স্টেশন, মদিনা মসজিদ, পল্লীবিদ্যুত সহ উপজেলা সদরের বিভিন্ন অলিগলির মুখে এই পিঠার দোকান দেখা যায়।
শীতের পিঠা বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন অনেকে। সরেজমিনে এ সব এলাকা গুলো ঘুরে পিঠা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাঁচবিবির এসব দোকান গুলোতে পিঠা বলতে পাওয়া যায় কেবল ভাপা পিঠা, ঝাল পিঠা, পাকান পিঠা, সাদা পিঠা আর চিতই পিঠা। তাই মৌসুমি এই পিঠার প্রতি অনেকের বেশ আগ্রহও দেখা যায়।
বছরের সাময়িক সময়ের এই পিঠার বাজার এখন থেকেই জমে উঠেছে, মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় এই পিঠার চাহিদা বেশি থাকে বলেও জানান বিক্রেতারা। পাঁচবিবি মদিনা মসজিদ এলাকায় প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করেন জাহানারা আক্তার। স্বামী কে হারিয়ে সন্তানদেরকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে একাই সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। সারা বছর দিন মুজুরের কাজ করে চলে জাহানারা আক্তারের সংসার।
শীতের সময় আসলেই সকল কাজ ছেরে দিয়ে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের অভাব দূর করতে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠা বিক্রি করে দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা আয় করেন আলেয়া ।
স্টেশনে স্বমী এবং স্ত্রী মিলে সারা বছর পিঠা বিক্রি করে ছেলে মে কে পড়াশুনার খরচ চলাছেন । তারা জানান, আমরা দুজনে মিলে প্রায় কয়েক বছর ধরে পিঠার ব্যবসা করে এক ছেলে এবং এক মেয়ে কে পড় লেখা কড়াই। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রয়েছে ক্রেতার ভিড়। প্রতিনিয়ত ক্রেতার ভিড় বেড়েই চলেছে। এতে আয় রোজগার ও হচ্ছে ভালো।
ক্রেতা নূরনবী এবং আব্দুল মুমিন বলেন, শীত মানেই পিঠা খাওয়ার ধুম। তবে সেই পিঠা যদি হয় ভাপা পিঠা তাহলে তো কোন কথাই নেই। নিজেকে র্রিফ্রেশ করার জন্য দিনের শেষে বন্ধুদের নিয়ে সন্ধ্যায় আসি ভাপা পিঠা খেতে। এতে করে সবার মাঝে ভালো লাগা কাজ করে ।