নাটোরে মাদ্রাসার ৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পালিয়েছে শিক্ষক, সিংড়া থেকে শিক্ষার্থী উদ্ধার, শিক্ষক পলাতক
নাটোর প্রতিনিধি, আসাদুজ্জামান, ০৩ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নাটোরের ভাতুরিয়া এমদাদুল উলুম কওমী মাদ্রাসার ৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পালিয়েছে ওই মাদরাসার শিক্ষক আব্দুস সাত্তার। বুধবার রাতের কোন এক সময় তিনি ওই ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে সকালে পুলিশকে অবহিত করে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। পরে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নাটোরের সিংড়ার তিরোইল গ্রামের একটি বাড়ী থেকে ওই ৭ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করলেও শিক্ষককে আটক করতে পারেনি। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থীরা নাটোর সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পলাতক শিক্ষক আব্দুস সাত্তার সিংড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত রাতে কোন এক সময় শিক্ষক আব্দুস সাত্তার মাদ্রাসার ৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যান। ভোরে মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মাদ্রাসায় ওই সাত শিক্ষার্থীকে দেখতে না পেয়ে মাদ্রাসা এলাকায় খোঁজাখুজি শুরু করে। খোঁজাখুজির করে না পেয়ে বিষয়টি মাদ্রাসার দায়িত্বরত হুজুরকে জানানো হয়। এদিকে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাচ্ছেনা ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জড়ো হতে থাকে। এই ঘটনাটি নিয়ে উত্তেজনা শুরু হলে বিষয়টি পুলিশকে জানায় মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।
পরে পুলিশ ওই শিক্ষকের স্বজনদের সাথে কথা বলে ও মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে ওই শিক্ষকের সর্বশেষ অবস্থান সনাক্ত করে। সেই হিসেবে নাটোর থানা পুলিশ বিষয়টি সিংড়া থানা পুলিশকে জানালে সিংড়া থানা পুলিশ সিংড়ার তিরোইল গ্রামের একটি বাড়ী থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এর পর পুলিশ তাদের উদ্ধারের বিষয়টি অভিভবাকদের জানালে সিংড়া থানায় গিয়ে পৌছায় অভিভাবকরা। তবে এখনো ওই শিক্ষক আব্দুস সাত্তার নিখোজ রয়েছে। পরে উদ্ধারকৃত ৭ শিক্ষার্থীকে নাটোর সদর থানা হেফাজতে দেওয়া হয়।
ভাতুরিয়া এমদাদুল উলুম কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ জানান, বড় হুজুরের কথামত তিনি মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। রাতের অন্ধকারে শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ৭ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়াটা আলেম সমাজের জন্য কলংক। কি কারনে এভাবে তিনি পালিয়ে গেলেন তা তারা এখনও জানতে পারেনি। তবে এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জয়নাল আলী, আলমগীর হোসেন ও স্থানীয়রা জানায়, এই মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুল রকিব তিনি ঠিকমতো মাদ্রাসায় অবস্থান করেন না। তার আরেকটি মাদ্রাসা রয়েছে তিনি সেখানে বেশিরভাগ সময় অবস্থান করেন। এই মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটার পরও তাকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। অভিভাবক সহ স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করেছেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার নাজিরুজ্জামান মৃধা জানান, তিনি সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কি কারনে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। বিষয়টি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। পরে সবাই বসে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা জানান, শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক পালিয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। সেখানে তিনি ৭ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষকের নিখোঁজ থাকার সত্যতা পেয়েছেন। এর পর প্রাথমিক তদন্ত ও মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে ওই শিক্ষকের সর্বশেষ অবস্থান সনাক্ত করা হয়। পরে সিংড়ার একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে সিংড়া পুলিশ ৭ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে । তবে ওই শিক্ষক আব্দুস সাত্তারকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এখনও এঘটনায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি।
এ বিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্ধার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পর নাটোর সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে শিক্ষক আব্দুস সাত্তারকে আটক করা সম্ভব হয়নি।