লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যায়, মাদারীপুরের ১৬’র মধ্যে ১১ জন নিখোঁজ, মৃত-১, দালাল আটক

মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ৩০ মে, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উদ্বিঘ্ন-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মাদারীপুর জেলার নিখোঁজ যুবকদের পরিবার। তবে অনেক নিখোঁজ যুবকদের সঠিক পরিচয় না পাওয়ায় তাদের পরিবারকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় নিহত রহিম খালাসী (৩০) রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের বাসিন্দা মৃত খালেক খালাসীর ছেলে বলে জানা গেছে।

আরো নিখোঁজ রয়েছেন- ইশিবপুর ইউনিয়নের উত্তর আড়াইপাড়ার সিদ্দিক আকনের ছেলে সজিব আকন (২০), হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে’র রাজ্জাক হওলাদারের ছেলে জুয়েল হাওলাদার(২২), একই গ্রামের শাহালম হওলাদারের ছেলে মানিক হাওলাদার (২৮), টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, মনির, আয়নাল মোল্লা ও মাদারীপুর সদর উপজেলার জাকির হোসেন, জুয়েল হোসেন, সৈয়দুল, ফিরোজ ও দুধখালীর শামীম।

চিকিৎসাধীন আছেন- রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নারায়ণপুরের মোক্তার আলী শিকদারের ছেলে মোঃ আলী (২২), একই উপজেলার ইশিবপুর গ্রামের মোঃ খলিল খালাসীর ছেলে সম্রাট খালাসী (২৯) ও ইশিবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোয়ালদি গ্রামের কালাম মাতুব্বরের ছেলে শাহীন মাতুব্বর (২৩) এবং জেলা সদর উপজেলার তীর বাগদির খালেক বেপারীর ছেলে ফিরোজ বেপারী (২৫)।

এদিকে হতাহতের ঘটনা শুনে শুক্রবার বাংলাদেশি দালাল জুলহাস সরদারের বাড়িতে হামলা করে নিখোঁজ যুবকদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় ওই দালাল নিজেকে করোনা রোগী বলে পরিচয় দেয়। পরে পুলিশ তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। দালাল জুলহাস উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সত্যবর্দীর মজিদ সরদারের ছেলে।

সরেজমিনে গেলে হোসেনপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিখোঁজ জুয়েল হাওলাদারের পিতা রাজ্জাক হাওলাদার ও মা রহিমা বেগম বলেন, “আমাদের ছেলেসহ রাজৈরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজনকে দালাল চক্র লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪/৫ লাখ টাকা চুক্তি করে নিয়ে যায় ৩/৪ মাস আগে। তারপর লিবিয়ার ত্রিপলী না নিয়ে বেনগাজী নামে এক গ্রামে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে।

এরপর ভয়েজ রেকর্ডে নির্যাতনের শব্দ পাঠিয়ে আরো ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমরা উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের সত্যবতী গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে জুলহাস শেখ নামের ওই দালালের বাড়িতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আসি। মানুষের কাছে শুনতে পাচ্ছি লিবিয়ায় গুলি করে অনেক বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ছেলে বেঁচে আছে কি না তাও জানতে পারছি না। এখন পর্যন্ত ছেলের কোনো খোঁজ পাই নাই।” ১৫ দিন পূর্বে আমার ছেলের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। এর পর আর কোন খোঁজ পাইনা।

একই গ্রামের নিখোঁজ মানিক হাওলাদারের পিতা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, “আমার ছেলে মানিককে লিবিয়া নেওয়ার কথা বলে দালাল জুলহাস আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ছেলেকে বেনগাজী আটকে রেখে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। আমি আমার ছেলেকে আনতে জুলহাসের বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এখনো আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

রাজৈর থানার ওসি খোন্দকার শওকত জাহান বলেন, লিবিয়ায় লোক নেয়া দালাল জুলহাসের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে আমার করোনা হয়েছে। এ কথা শুনে আমরা তাকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিদের হত্যার কথা শুনেছি। যাদের মধ্যে মাদারীপুরের লোকজনই বেশি। মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে এ তথ্য আমি এখন পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাইনি। মন্ত্রনালয়ে আমি যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে মাদারীপুরের কতজন মারা গেছে সে তথ্য আমাকে দিবে। লাশ কিভাবে দ্রুত দেশে আনা যায় সে বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *