নরসিংদী সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চলছে ব্যপক ঘুষ বানিজ্য ও অনিয়ম, নীরব ভূমিকায় প্রশাসন
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ১৫ জুন ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নরসিংদী সদর উপজেলা-সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রকাশ্যে দুর্নীতি ও লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্য চলে আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। নরসিংদী সদর-সাব রেজিষ্ট্রার মো: নুরুল হক মিয়ার ছত্রছায়ায় অফিসের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার যোগসাজেসে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শফিক নামের এক নকল নোবিস।
এছাড়াও একটি চক্র সংঘবদ্ধ ভাবে নরসিংদী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি-অনিয়ম ও হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে। নরসিংদী সদর-সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা না হয়েও ভুয়া কর্মকর্তা বলে দালালরা দলিল করতে আসা সাধারন জনগনের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে সরকারী কর্মকর্তা না হয়ে নকল-নবীশ হয়ে সরকারী কর্মকর্তার প্রভাব দেখাচ্ছে।
প্রভাবশালী মহলের ব্যক্তিরা সদর-সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মকর্তাদেরকে ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণ করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শত শত একর জমি, প্লট-ফ্লাট সম্পূর্ন অবৈধ ও বেআইনীভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হচ্ছেন তারা। এসব অবৈধ কর্মকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতা-কর্মী, পুলিশসহ নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকদের হাত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দলিল করতে আসা জনগন জানায়, নরসিংদী সদর সাব-রেজিস্ট্রার ও একই অফিসের রেকর্ড রক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্য দালালের মাধ্যমে যোগসাজসে কাগজপত্র জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এবং বালাম টেম্পারিং ও পাতা ছিড়ে ফেলাসহ নানারকম জাল-জালিয়াতি করার সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়াও জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে সরকারকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে সরকারের রাজস্বকে ফাকি দিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন দলিল রেজিস্ট্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এছাড়াও এই অফিসে নরসিংদীস্থ বিভিন্ন এলাকার জমি রেজিস্ট্রিতে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও সাব কাবলা দর্লিলের ক্ষেত্রে ১১% হারে রাজস্ব নেয়ার কথা থাকলেও দলিল লেখকরা দলিল দাতা ও গ্রহিতাদের জিম্মি করে প্রতিলাখে ১৭% হারে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও বসতবাড়িতে নাল, নাল জমিকে ডুবা, ডুবা জমিকে জলাশয় দেখিয়ে দলিল করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, রাজনৈতিক মহলের নাম ব্যবহার করে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে প্রভাবশালী মহলের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন সময়ে এখানে সাধারন দলিল করতে আসা গ্রাহকদের থেকে দলিলের টাকা মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ছিনতাই করে নেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক মহলের নেতাদের নাম ব্যবহার করে প্রতি দলিলে ১ হাজার টাকা করে সাবরেজিস্টারের সামনেই প্রকাশ্যে আদায় করছে শফিক নামে এক নকল নোবিস।
এছাড়াও নকল নোবিস শফিক সকল দলিলাদি নিজেই দেখাশুনা এবং প্রকাশ্যেই সাক্ষর করে যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টি দলিল হয়ে থাকে। ১ হাজার টাকা হারে দলিলপ্রতি ঘুষ গ্রহন করলে ৩০০ দলিলে প্রতিদিন ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রার ও তার মনোনীত নকল নোবিস শফিক। তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। এছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গনমাধ্যমকর্মীদের সাবরেজিস্ট্রার ও শফিক বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের চারপাশে শুধু দালাল আর দালাল। এসব দালালরা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে আসা উপকারভোগীদের সাথে নানা ছলে বলে কৌশলে কথা বলে তাদেরকে একসময় জিম্মি করে ফেলে। জানা গেছে, এসব দালালদের সাথে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিকে, সাব-রেজিষ্ট্রি কর্মকর্তাদেরকে জমি ক্রয় ও বিক্রয়কারীকে খাস কামড়ায় নিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে গোপনে কথা বলতে দেখা যায়।
এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে মুল কপি না দেখে এবং সঠিক কাগজপত্র না নিয়ে জাল ও ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে অনেক দলিল রেজিস্ট্রি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে নরসিংদী সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো: নুরুল হক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিন বলেন, শফিক প্রকাশ্যে টাকা নেয়ার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে। আপনাদের যা করার করতে পারেন। আপনাদের যা লেখার লেখতে পারেন। এতে আমার কিছু আসে যায় না। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কেরানী মাজেদা বেগমকে দলিল দেখাশুনার কথা থাকলেও তাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছেন না সাব রেজিস্টার ও নকল নোবিস শফিক।
একজন নকল নোবিস হয়ে কিভাবে দলিল দেখাশুনা ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিক বলেন, আমাকে সাব রেজিস্টার সয়ং নিজে বসিয়েছেন। আমি আগে যেভাবে টাকা নিচ্ছি এখনো সেভাবেই নিচ্ছি। আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা, একজন সাবরেজিস্টার ও নকল নোবিস নরসিংদী সদরের জনগনকে জিম্মী করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেউ। এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।