দেবিদ্বারে দূর্বৃত্তদের দেয়া পেট্রোলের আগুনে যুবদল নেতার বাড়ী পুড়ে ছাঁই
কুমিল্লা (দেবিদ্বার) প্রতি নিধি, জি এম মাকছুদুর রহমান, ২৫ জুন, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : দেবিদ্বারে যুবদল নেতা মোঃ জাহিদ হাসানের বাড়ি পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১০টায় উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের ওই যুবদল নেতার পৈতৃক বাড়ির টিনসেট পাকা ভিটি ও দেয়াল বেষ্টিত ১০ কক্ষের ঘরটিতে দূর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিলে পুরো ঘর এবং ঘরে থাকা আসবাব সামগ্রী আগুনে সম্পূর্ন ভষ্মীভূত হয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে দেবিদ্বার থানা পুলিশ ফায়ার সার্ভিস’র বরাত দিয়ে জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে, আর ফায়ার সার্ভিস’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে স্থানীয়দের ভাষ্যানুযায়ী বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং ঘরে লোকজন না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিকান্ডে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১০টায় উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে যুবদল নেতা জাহিদ হাসানের পৈতৃক বাড়ির পাকা ভিটি ও দেয়াল করা টিনসেট ঘরের মাঝখানের কক্ষের একটি জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। মূহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহানশিখা আকাশমূখী হয়ে উঠে। স্থানীয়রা বাড়িতে আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং থানা পুলিশকে খবর দেয়।
সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) সুজন দত্ত’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ এবং মুরাদনগর ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোঃ জহিরুল ইসলাম ও ষ্ট্যাশন মাষ্টার মোঃ তুষার হোসেন’র নেতৃত্বে ৬সদস্যের একটি দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ততক্ষনে পুরো ঘর এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও ঘরের উপরের গাছগাছালি আগুনে সম্পূর্ন ভষ্মীভূত হয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী রাবেয়া বেগম জানান, আনুমানিক রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি ঘর থেকে বাহির হয়ে দেখতে পান জাহিদের ঘরের চালের উপর আগুন। ওই সময় তার আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুঁটে আসেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রনের আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুরো বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ফতেহাবাদ ইউপি’র ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ইউনুছ মেম্বার জানান, অগ্নিকান্ডের ধরন রহস্যজনক। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকান্ডের কোন লক্ষন দেখা যায়নি। ওই দু’টির কোনটাই ব্যবহার হচ্ছেনা, তাছাড়া ওই বাড়িতেও কেহ থাকেননা।
জাহিদের পাশের বাড়ির আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জয়দল হোসেন জানান, জাহিদরা ছয় ভাই, তাদের মধ্যে ৪ ভাই আবুল কাসেম, জহিরুল ইসলাম, জাহিদ হাসান, সাদ্দাম হোসেন কাতার এবং সৌদিআরবে ব্যবসা করছেন। তাদের মা সাহেরা বেগম ছোট দুই ভাই কুমিল্লা ভিক্টোরীয়া সরকারী কলেজ’র দর্শন বিভাগের অনার্সের ছাত্র শরিফুল ইসলাম এবং ইস্পাহানী পাবলিক কলেজ এন্ড স্কুলের প্রথম বর্ষের ছাত্র আরিফুল ইসলামকে নিয়ে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্টের বাসায় বসবাস করায় গ্রামের ওই বাড়ি সব সময়ই তালা বদ্ধ থাকে। তবে তাদের সকল ধরনের ব্যবহার্য্য আসবাব সামগ্রী গ্রামের বাড়ির ১০টি কক্ষে সংরক্ষিত ছিল।
ধারনা করা হচ্ছে এই সুজোগে পূর্বশত্রুতার জের ধরে কেউ জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ঘরের একটি জানালা খোলা পাওয়া যায় এবং ওই জানালার পাশে একটি ২লিটারের পেট্রোলের খালি বোতল পাওয়া যায়, ঘরে বিদুৎ সংযোগও বন্ধ ছিলো। গ্যাস সিলিন্ডারও খালি ছিল। সমস্ত কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভবন সহ প্রায় ৩০লক্ষাধিক টাকার মালামাল সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায়। তবে ভবনের পূর্বাংশের জানালা দিয়ে দূবৃত্তরা পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগালেও পশ্চিম পার্শ্বের দেয়ালের পাশে লাগানো বৈদ্যুতিক মিটারটি অক্ষত ছিল।
সৌদিআরব থেকে সেল ফোনে জাহিদ হাসান জানান, আমার কোন শত্রু ছিলনা। আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচন করার পর থেকেই স্থানীয় কিছু আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাবে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। ফেইজবুকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে আমি পোষ্ট দিলে তা নিয়েও আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিয়ে আসছিল। আমার মনে হয় তারই অংশ হিসেবে আজ আমার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
জাহিদের মা’ সাহেরা বেগম জানান, অগ্নিকান্ডের সংবাদ পেয়ে তিনি কলেজে পড়ূয়া ২পুত্রকে নিয়ে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্টের বাসা থেকে রাতেই ছুটে আসেন। তিনি জানান আমার ৬পুত্র ও ২কণ্যা। ৪পুত্রই প্রবাসে থাকেন, ২পুত্রকে নিয়ে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্টের বাসায় থেকে তাদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। তবে তিলে তিলে গড়া সংসারের সমস্ত কিছুই নিমেশে শেষ করে দিল দূর্বৃত্তরা।
তিনি আরো বলেন, আমি গত ঈদের দিন বাড়িতে ছিলাম, সিলিন্ডারের গ্যাস না থাকায় পাশ্ববর্তী ঘর থেকে রান্না করে খাবার খেয়েছি, যাওয়ার সময় ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যাই। তবে আমার শোয়ার ঘরের একটি জানালার সিটকারী দূর্বল ছিল বাহির থেকে খোলা যেত। দূর্বৃত্তরা ওই জানালাটিই অশুভ কাজে ব্যবহার করেছে। আমার পুত্র বিএনপি করারয় প্রতিপক্ষ এজঘন্য কাজটি করতে পারে বলে ধারনা করছি। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে এটা সত্য নয়। নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সত্য বেড়িয়ে আসবে।
ঘটনাস্থল থেকে আসা দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) সুজন দত্ত নিশ্চিত করে বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত, স্থানীয়দের পক্ষ থেকে পেট্রোলের আগুন বা পেট্রোলের বোতল ঘটনাস্থলে ছিল এমন কথা কেউ জানাননি, তাছাড়া রাতের অন্ধকারে আমাদেরও বোতল চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আগুন দূর্বৃত্তরা লাগায়নি। বৈদুতিক সর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্বিস থেকে এমনই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।