চৌদ্দগ্রাম দাফনের ৯ দিন পর বাড়ি ফিরলেন নিখোঁজ তরুণী
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মন্নান, ০১ জুলাই ২০২৪ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দাফনের ৯দিন পর বাড়ি ফিরলেন নিখোঁজ তরুনী রোকসানা আক্তার(৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর গ্রামে। এনিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, দাফন করা নারী কে? অপরদিকে ফিরে আসা তরুণীকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষ তাঁর বাড়িতে ভীড় জমায়। ফিরে আসা রোকসানা আক্তার ওই গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে।
জানা গেছে, মে মাসের শেষ দিকে রোকসানা আক্তার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় বেড়াতে যায়। পহেলা জুন ভোরে কাউকে না জানিয়ে বাইরে দরজায় তালাদিয়ে রোকসানা বাসা থেকে বের হয়। এরপর দীর্ঘদিন আত্মীয় স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ১৭ জুন ঈদুল আযহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, ফেনী শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনের মাঝে একজন নারীর লাশ পড়ে আছে।
তারা সেখানে গিয়ে লাশের চেহারা রোকসানা আক্তারের চেহারার সাথে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে খবর পাঠান। এরই মধ্যে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ লাশটির সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাতেই এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশ-পাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে লাশটি একই রকম কিনা জিজ্ঞেস করলে সকলেই ছবির সাথে মিল রয়েছে বলে জানান।
পরে এবায়দুল হকসহ আত্মীয় স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসের সাথে দেখা করে বোন রোকসানার ছবি দেখান। উপস্থিত পারস্পরিক আলোচনায় উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসকে তারা রোকসানার লাশ শনাক্ত করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের হাতে বোন রোকসানা আক্তারের লাশ হস্তান্তর করে। ওইদিন বাদ আছর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দীঘির দক্ষিণ পাড়ে তার লাশ দাফন করা হয়। নামাজে জানাযায় ইমাম মাওলানা আবু তাহের, ভাই এবায়দুল হকসহ এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলগণ উপস্থিত ছিলেন।
লাশ দাফনের ৯দিন পর গত ২৬ জুন বুধবার বিকেলে’ রোকসানা স্বশরীরে বাড়িতে হাজির হলে আৎকে উঠেন সবাই। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানাজানি হলে বাড়ির উঠানে আশ-পাশের উৎসুক মানুষ তাকে একনজন দেখতে ভীড় জমায়। এ সময় নারী-পুরুষ তাকে একবাক্যে জিজ্ঞেস করে, রোকসান তোমাকে দাফন করলাম, তুমি কোথায় থেকে আসলে? তখন সে বলতে থাকে, কে বলছে আমি মারা গেছি? আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। শরীর খারাপ থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। উল্টো এখন রোকসানাই ভাই এবায়দুল হক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করছে, আমাকে ভেবে তোমরা কোন মহিলাকে দাফন করেছো, কি তার পরিচয়?
ফিরে আসা রোকসানা আক্তার বলেন, আমি চট্টগ্রাম ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু আমি বাড়ি থেকে কোন কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি। ২৬ জুন বুধবার বাড়িতে এসে দরজা নক করলে আত্মীয় স্বজনরা আমাকে দেখে হতবাক হয়েছেন। তখন আমি জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি এবং আমার লাশও দাফন করা হয়ে গেছে। আমিতো জীবিত ফিরে আসলাম।
নিখোঁজের ৯দিন পর ফিরে আসা রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, ‘খালাতো ভাই-বোনের সংবাদ পেয়ে ছবিতে কিছুটা মিল থাকার কারণে বোনের লাশ মনে করে পুলিশ থেকে লাশটি এনে দাফন করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রোকসানা জীবিত বাড়ি ফিরলে ফেনী মডেল থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মুসা বলেন, ‘লোক মারফতে বিষয়টি শুনেছি। তবে কার লাশ দাফন করা হয়েছে সেটিই এখন দেখার বিষয়’। ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘উদ্ধার করা লাশটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তার স্বজনরা উদ্ধারকৃত লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন স্বশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করবো’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘তরুণী নিখোঁজ, উদ্ধার, দাফন ও আবার ফিরে আসার বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। খবর নিয়ে দেখবো-আসলে কি ঘটেছে’।