চৌদ্দগ্রামে পাশবিক নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে মাদরাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, আবদুল মান্নান, ৩১ মে, ২০২২ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রভাবশালী মহলের পাশবিক নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে রুমানা আক্তার সুইটি নামে এক মাদরাসা ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের কনকাপৈত গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে। পুলিশ লাশ উদ্ধার ও ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার বিকেলে সুইটির লাশ দাফন করা হয়েছে।
রুমানা আক্তার সুইটির বাবা কামাল হোসেন বলেন, সুইটি স্থানীয় একটি মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সুমন নামে এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। সুমন বিবাহিত হওয়ায় বিষয়টি আমরা মেনে নেইনি। এনিয়ে তাকে আমরা বকাঝকা করলে ১৫ দিন আগে সে তাঁর খালা চিওড়া ইউনিয়নের গুর্ণিশকরা গ্রামে শাহেনার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে গত রোববার দিবাগত রাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় আমজাদের বাজারের নৈশ প্রহরী সাদেক মিয়া তাকে আটক করে।
এরপর তাকে বাজারের উপদেষ্টা প্রভাবশালী হাজী আবদুল করিম, হাজী শিপন ও ছুট্টু মিয়ার নিকট হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে আমি খবর পেয়ে ভোররাতে মেয়েকে আনতে আমজাদের বাজার গেলে প্রভাবশালী মহলটি আমাকে বলে তোমার মেয়ের প্রেমিক সুমন মিয়াকে খবর দেওয়া হয়েছে। সে নগদ দুই লক্ষ টাকা নিয়ে এসে আমাদেরকে দিলেই তোমার মেয়েকে ছেড়ে দিব। এ কথা বলে তারা আমার মেয়েকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়।
কামাল হোসেন আরও বলেন, বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমার মেয়েকে দিব-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করায় আমি পুলিশকে জানাব বললে তারা আমার থেকে একশ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে রোববার বেলা ৩টায় সুইটিকে আমার নিকট হস্তান্তর করে। এ সময় তারা হুমকি দিয়ে বলে মেয়ের জবানবন্দি শুনে যদি এনিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়, তাহলে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় প্রভাবশালী মহল। আমি ভয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। রাতে মেয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সোমবার দুপুরে সে বাসার টয়লেটে ঢুকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
রুমানা আক্তার সুইটির ফুফাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, আমরা সুইটির খবর পেয়ে ভোররাতে তাকে আনতে আমজাদের বাজার যাই। সেখানে বাজারের নৈশ প্রহরী ও প্রভাবশালী মহল সুইটিকে একটি ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরের দিন বেলা ৩টায় তারা আমাদের থেকে স্বাক্ষর রেখে সুইটিকে আমাদের হাতে তুলে দেয়। সুইটি পাশবিক নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
বাজারের নৈশ প্রহরী সাদেক মিয়া বলেন, রাত ১টা ২০মিনিটের সময় মেয়েটিকে আমজাদের বাজার দেখতে পেয়ে আটক করে স্থানীয় হাজী করিম, হাজী শিপন ও ছুট্টু মিয়ার হাতে তুলে দেই। পরবর্তীতে তারা মেয়েটিকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে রেখে মেয়ের পরিবারকে খবর দেয়। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।
অভিযুক্ত প্রভাবশালী হাজী আবদুল করিম বলেন, ‘মেয়েটিকে নৈশ প্রহরী আটক করে আমাদেরকে খবর দেয়। আমরা সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পুলিশকে কেন খবর দেওয়া হয়নি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাজারের উপদেষ্টা। দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধের কারণে একশ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে মেয়েটিকে তার বাবার হাতে তুলে দেই। তবে কোন ধরনের পাশবিক নির্যাতন করি নাই’।
অপর অভিযুক্ত ছুট্টু মিয়া বলেন, ‘মেয়ের প্রেমিকের কাছে দুই লক্ষ চাওয়া হয়নি। তাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। মেয়েটির বাবার হাতে কেন সকাল বেলা হস্তান্তর করা হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি জটিল মনে হয়েছিল, সেহেতু বুঝে উঠার জন্য সময় নেওয়া হয়েছে’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘রুমানা আক্তার সুইটি নামে এক মেয়ের আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।