চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশী ১৭২ ছাত্র-ছাত্রী মাদারীপুরের শিক্ষার্থী আবিরের দেশে ফেরার আকুতি
মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি, আরিফুর রহমান, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চীনের ইচাং শহরে বিশ্ববিদ্যালয়, ”চায়না থ্রী গর্জেজ বিশ্ববিদ্যালয়”-এ অধ্যয়নরত ১৭২ বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী আটকে পড়েছে। এরমধ্যে মাদারীপুরের ৩ জন। একজন মেডিকেলে এমবিবিএস শিক্ষার্থী আশিক হাওলাদার আবির জেলা শিবচরের শিরুয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুরাদ হাওলাদারের ছেলে। লিখিত ভাবে চীন থেকে আবির এ সকল শিক্ষার্থীদের আটকে পড়া অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
আবিরের লিখিত আবেদনটি হুবুহু তুলে ধরা হলো- “ইতোমধ্যেই উহান নোভেল করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে অবগত হয়েছেন। যেটা কিনা চায়নার হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং এই প্রদেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই হুবেই প্রদেশেরই অন্যতম একটি শহর হচ্ছে ইচাং যা কিনা করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি স্থল উহান শহর থেকে মাত্র ২৮০ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত। ইচাং শহরে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়,”চায়না থ্রী গর্জেজ বিশ্ববিদ্যালয়”।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের ৫০টি দেশের ছাত্রছাত্রীসহ রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ২৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী। শীতকালীন ছুটি উপলক্ষে প্রায় ৬৮ জন ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল (যখন কিনা করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়নি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রয়ে গিয়েছে আরো ১৭২ জন। বর্তমান জরিপ অনুযায়ী ইচাং শহরে ৫০০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ৬ জন ইতোমধ্যে মৃত্যবরণ করেছে। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২০ থেকে আমাদের শহর ইচাং লক ডাউন করেছে চায়না সরকার কোন রকম পূর্ব নোটিশ ব্যতীত। ট্রেন স্টেশন, এয়ারপোর্ট এবং শহরে সকল ধরণের যান-চলাচল, এমন কি শহরে বাজার ঘাট, সুপার শপসহ ছোট দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো সিলড করা হয়েছে। যার দরুন ১৭২ বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী হলের ভিতর বন্দী জীবন অতিবাহিত করছে মারাত্মক আতংকিত অবস্থায়। আতংক আরো বেড়ে গিয়েছে যখন আমরা শুনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসের জীবানু নিয়ে রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছে। শুধু আতংক নয়, রয়েছে মারাত্মক খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট। মানসিক দুশ্চিন্তায় এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে ২জন বাংলাদেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে ১৭২ জন ছাত্র-ছাত্রীর অনেকেই অসুস্থ এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিনই পরিবার পরিজনের আহাজারি শোনা যাচ্ছে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে। কখনো কখনো কারো কারো বাবা মা তাদের সন্তানের অবস্থা শুনে বার বার শোকে অচেতন হয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবারের কথা চিন্তা করে শত কষ্ট বুকে চেপে প্রতিনিয়ত ভালো থাকার মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে তাদের বাবা-মাকে। ইতোমধ্যেই উহান থেকে বাংলাদেশে ৩১২ জন ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।
আমরা বার বার চায়নার বেইজিংএ অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে আমাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কথা বললে দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রথম দিকে আমাদের আশ্বাস দিলেও অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বর্তমানে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোন আশার বানী শুনতে পারা যায়নি। মন্ত্রী পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো এই ১৭২ জন শিক্ষার্থীকে চার্টাড ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে দাপ্তরিক জটিলতার কারণে আটকে গেছে সে সব প্রক্রিয়া। এখনো সবার আকুল আবেদন সরকারি হস্তক্ষেপে নিরাপদে দেশে ফিরে যাওয়ার।