গুরুদাসপুরে ইমরানের প্রেম-ধর্ষণ-বিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার চায় লরিন
নাটোর প্রতিনিধি, আসাদুজ্জামান, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণ। সর্বশেষ চাপে পড়ে বিয়েও করেছেন। কিন্তু মেলেনি স্ত্রী’র মর্যাদা ও অধিকার। প্রতারক স্বামী ইমরান হোসেন (২৬) ও তার পরিবার মেনে নিচ্ছেন না এই বিয়ে। কিন্তু স্বামীর ঘরে ফিরে সুখে সংসার বাঁধতে চান গৃহবধূ মাহবুবা মাসুদ রুসমিলা ওরফে লরিন(২৫)।
স্ত্রীর মর্যাদা পেতে শুক্রবার বিকেলে স্বামীর বাড়ির মূল গেটে অনশন অবস্থান নেন তিনি। সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাঞ্চনা-ভৎসনা ও একপর্যায়ে শারিরীক নির্যাত চালায় তার উপর। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ গৃহবধূ লরিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে তার শারিরীক অবস্থা শঙ্কামুক্ত।
নির্যাতিত গৃহবধূ মাহবুবা মাসুদ রুসমিলা লরিন অভিযোগে জানান, শুক্রবার বিকালে গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লায় তার স্বামীর বাড়িতে (মোশারফ ভিলা) যান। এসময় শ্বশুর মোশারফ ও শাশুরীসহ শশুরবাড়ির লোকজন তাকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেন।
এরপর তিনি বাড়ির মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত আটটার দিকে শ্বশুর মোশারফের ইন্ধনে সোহেল রানা, রুবেল হোসেন, মিন্টু ও বাটুল তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। গালমন্দ লাঞ্চনা-ভৎসনা করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
গৃহবধূ লরিন জানান, গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মোশারফ হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেনের সাথে প্রায় দুই বছর আগে তার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইমরান তাকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন।
ইমরানকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ২৮মার্চ ইমরান বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় তার খালার বাড়িতে নিয়ে যান। ১ এপ্রিল ইমরানের পিতা মোরাশফসহ তার পরিবারের লোকজন উপস্থিত থেকে তাদের বিয়ে দেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে তাকে শশুরবাড়িতে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। সর্বশেষ শুক্রবার বিকালে স্বামীর বাড়িতে গেলে তাকে শারিরিকভাবে নির্যাতন করে বের করে দেয় শশুরবাড়ির লোকজন।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর বাবা মাসুদুর রহমান এ্যাপোলো জানান, ইমরান তার মেয়েকে ঘর ছাড়া করেছে। জাকির সোনার, ইমরানের দুলাভাই মজনুসহ স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন। তবে এখন কি কারণে মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিচ্ছেন না তার কারণ তিনি নিজেও জানেন না। স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে মেয়েটি আত্মহত্যা করতে পারে এমন আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি।
গৃহবধূ লরিনের শশুর মোশারফ হোসেন বলেন, আমার ছেলে (ইমরান) নিজে নিজেই ওই মেয়ে(লরিন) কে বিয়ে করেছে। ছেলেটি বাড়িতে না থাকায় ছেলের বউকে ঘরে তোলা হয়নি। তবে বাড়ির গেটে ছেলের বউ লরিনকে মারধোর বা নির্যাতন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা ‘জানেন না’ বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশী জানায়, বাবা মোশারফ হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় এর আগেও অভিযুক্ত নেশাগ্রস্থ ইমরান এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিয়ের প্রলোভনে অনেক মেয়েকেই তিনি ধর্ষণ করেছেন। পরে টাকার জোড়ে এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়েছে। অভিযুক্ত ইমরান এলাকার বাহিয়ে থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস বলেন, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছেলের বাবা মোশারফকে থানায় ডাকা হয়েছিল। তিনি তার ছেলের বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। ২৫ এপ্রিল তার ছেলেকে থানায় নিয়ে এসে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাবেন।