কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে কৃষি জমিতে মেহগনির তেল ব্যবহার
নীলফামারী প্রতিনিধি, শাইখুল ইসলাম সাগর, ২২ অক্টোবর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মেহগনি গাছের ফল থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরী তেল ক্ষেতে প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে এ তেল ক্ষেতে ব্যবহারে ক্ষতিকর পোকা দমন ও ইদুনে নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এতে একদিকে যেমন কমছে খরচ অপর দিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির আঙ্গিনায় একত্রিত হয়ে মেহগনির তেল তৈরীতে পার করছেন ব্যস্ত সময়। কেউ ফল থেকে আলাদা করছেন বিচি আবার কেউ করছেন গুঁড়ো। এই কর্মযজ্ঞ চলার পর তেল প্রস্তুত হলে কাঁধে স্প্রে মেশিন আর বালতিতে মেহগনির তেল নিয়ে ধানক্ষেতে দিকে ছুটছেন কৃষকেরা। সেখানে গিয়ে পানির সঙ্গে মেহগনির তেল মেশানোর পর ছেঁকে নিয়ে মেশিনে ভরে স্প্রে করছেন ফসলের খেতে।
পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাইয়ুম জানান, পোকামাকড়ের পাশাপাশি ইদুর ধানের ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই এবার প্রথমবারের মতো জমিতে মেহগনির তেল ছিটানোর পর ইদুর আক্রমণ করতে পারেনি। জমিতে কিটনাশক ছিটানোর সময় অনেক সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন নাক ও মুখ ঢাকতে হয়। নইলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। মেহগনির তেল ব্যবহারে সময় শারিরীক কোন সমস্যা হয়না। এছাড়া কীটনাশকের বিকল্প মেহগনির তেল ব্যবহারে অনেক খরচ কমে গেছে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, বোরো ধানের জমিতে তিনবার কীটনাশক স্প্রে করেও তেমন সুফল মেলেনা। অনেক সময় ওষুধ কাজ করেনা। পরে আবারও স্প্রে করতে হয়। বিশেষ করে ইঁদুরে অত্যাচারে অতিষ্ট আমরা। প্রতি এক বিঘা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। এতে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্খা থাকে। মেহগনির তেল ব্যবহারে খরচ কম এবং ফলনও ভাল হয়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে জৈব কীটনাশকের বিকল্প নাই। সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের কীটনাশকের বিকল্প ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারাও পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। ফলে একদিকে যেমন খরচ কমছে অপর দিকে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর এখন সরকারিভাবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফসলে কীভাবে কীটনাশকের বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করা যায় এজন্য কৃষি দফতর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ ধরনের জৈব পদ্ধতি নিঃসন্দেহে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের একটি অনুষঙ্গ। কৃষকদের এই পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করানো হচ্ছে।