১৯৮০ সালের ৩ জুলাই জন্ম নিয়ে ‘মিজান’ চট্টগ্রাম জেলার ১২৫ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়

 ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪):  ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর সদস্য মিজানুর রহমান মিজান চট্টগ্রাম জেলার ১২৫ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮০ সালের ৩ জুলাই আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মিজানের জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়। সূত্র জানায়, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ২ হাজার ৩৬৭ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় মিজানের নাম রয়েছে। এ তালিকায় গাইবান্ধার নিখিল রঞ্জন সাহা (জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩০ মার্চ) ও একই এলাকার জয়ন্ত কুমার সাহার (জন্ম ১৯৬১ সালের ১ মার্চ) নামও রয়েছে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মঙ্গলবার নিজ দফতরে বলেন, এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ তাদের কাছে রয়েছে। এমনকি মুজিবনগর কর্মচারীদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ছিল দুই থেকে চার বছর। এসব শিশু কীভাবে যুদ্ধ করেছে, তা বোধগম্য নয়। তাদের গেজেট বাতিল করা হলে আদালতের মাধ্যমে তারা আবারও বহাল হয়ে যান। সোমবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স ছিল চার বছর, তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, ২৩ বছরের বকেয়া ভাতা দিতেও বলা হয়েছে। চার বছরের শিশুকে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মেনে নেয়া হবে? আদালতের এমন আদেশে বিব্রত হচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা কী করব, কোথায় যাব- সে জায়গা পাচ্ছি না। তবে বাস্তবতাগুলো আদালতে বলেছি, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২২ জুলাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০০২ এর ৭ (ঝ) ধারা অনুযায়ী ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ২৩৬৭ জনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরের বছর ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ওই গেজেট বাতিল করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর রিট আবেদনটি করেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

গত বছর ১৯ জানুয়ারি রিটের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে দেয়া রুলে ওই প্রজ্ঞাপনটি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী উপসচিব ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া ২ হাজার ৩৬৭ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সংবলিত গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে একটি রুলের নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ। একই সঙ্গে যে তারিখে তাদের স্বীকৃতি প্রদান করে গেজেট হয়েছিল, সেই তারিখ থেকেই তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা গেরিলা বাহিনী গঠন করে মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন এই গেরিলারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *