‘সে একজন বাতিল ছাত্র` সেজন্য তার রেজিষ্ট্রেশন হয়নি’ 

নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ‘সে একজন বাতিল ছাত্র। সেজন্য তার রেজিষ্ট্রেশন হয়নি’ এমনটাই বলে নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করলেন নরসিংদীর মনোহরদী সরকারী কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম ফারুখ। অথচ তার অবহেলায় শিক্ষাজীবনের পাতা থেকে একটা বছর ঝড়ে পড়তে যাচ্ছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি ফলপ্রাথী মামুন মিয়া নামে এক শিক্ষার্থীর। নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে নিবন্ধন (রেজিষ্ট্রেশন) করতে না পারায় অনবিপ্রেত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

একটা বছর যাতে পিছিয়ে পড়তে না হয় তার প্রতিকার চেয়ে ওই শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছিলেন। আবেদন পেয়ে ইউএনও বিষয়টির দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলেও  দীর্ঘ নয়মাস পর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন ওই কর্মকর্তা।

জানা যায়, মনোহরদী সরকারী কলেজে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় মামুন মিয়া। নিয়মিত পড়াশোনা করে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৯ সালে প্রাক নির্বাচনী এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃতকার্যও হয়েছে। এমনকি ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত ফি দুই হাজার ৬৪০টাকা কলেজের অনূকুলে সোনালী ব্যাংক মনোহরদী শাখায় জমা দেয়। টাকা জমার রশিদ নিয়ে ফরম পূরণের জন্য কলেজে গেলে জানতে পারে তার নাম রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত হয়নি।

পরবর্তীতে কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মামুনের কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা পরিশোধ করার পরও রেজিষ্ট্রেশন না হওয়ায় গত ১৫ মার্চ অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পরবর্তী বছরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই দিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন মামুন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন ইউএনও। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘ নয় মাস পর গত ১৫ ডিসেম্বর ইউএনও কাছে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান কলেজের সাথে ওই শিক্ষার্থীর কোন সম্পর্ক নেই। সে বাতিল শিক্ষার্থী। কিন্তু মামুনের সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী মামুন জানান, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর জন্য কলেজ অধ্যক্ষ দায়ী। একই সঙ্গে আমাকে রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত করার জন্য ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাই।

এব্যাপারে মনোহরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, ‘সে একজন বাতিল ছাত্র। সেজন্য তার রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আমি নিজে কয়েকবার শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু অনলাইনে তার কোন ডক্যুমেন্ট না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। সেজন্য প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি তদন্তের জন্য কলেজে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ কোন প্রকার সহযোগীতা করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *