বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করার আহ্বানঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা, ১ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) : ব্যবসায়ীদের বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করে, কাজে লাগানোর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধ করতেই এটি জরুরী। আমাদের শুধু একদিকে তাকালে চলবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন দেশ, নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, এবং সেইসব বাজারে কোন ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যায় সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের মান নিশ্চিত করা, ব্রান্ডিং করা এবং এগুলোকে আকর্ষণীয় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যা যা সাহায্য করার তা তাঁর সরকার করে যাচ্ছে এবং করে যাবে বলেও উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’র (ডিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। সবসময় মাথায় রাখতে হবে বর্তমান বিশ্ব অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগিতাময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের বলেন শুধু নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনলেই হবে না। সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। আপনার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো একান্তভাবেই প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো ১২ টি দেশে নতুন দূতাবাস এবং ১৭টি মিশন খোলা হয়েছে। সে সব দেশের অ্যাম্বাসেডর, হাইকমিশনারদের ডেকে ওয়ার্কশপ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং দেশে বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরফলে ব্যবসার দ্বার আরো উন্মুক্ত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ বছর ওষুধ শিল্পকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ও ঘোষণা করেন। বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সুভাশীষ বোস এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তৃতা করেন। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনিতিক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং মেলায় অংশ গ্রহণকারী দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশীয় উদ্যোক্তাগণ তাঁদের নতুন পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ পান। আবার দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার একটি চিত্রও তাঁরা পেয়ে থাকেন। ফলে পণ্যের মানোন্নয়ন ও বহুমুখী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। জাতির পিতাই স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগী হবার পাশাপাশি শিল্প-উৎপাদনের দিকে নজর দেন। তিনি পশ্চিমাদের ফেলে যাওয়া কলকারখানাগুলো জাতীয়করণ করেন। জাতির পিতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র শাসনের সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৭ ভাগের উপরে উঠে গিয়েছিল। অথচ ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো সে সব কলকারখানা পানির দামে বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কাজ শুরু করে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়। তার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সরকার নিজে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না, কিন্তু সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। এই উদ্যোগের ফলেই আজ দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের ৪৬তম বৃহত্তম অর্থনীতি। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.২৮ শতাংশ। এখন আমদানি ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ আয় থেকে মেটানো হচ্ছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে একই সঙ্গে উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রীতিমত বিস্ময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স’ বলেছে ‘নেক্সট ইলেভেনে’র প্রথমে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০৫০ সালে পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। সিটি ইনভেষ্টমেন্ট রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস’ বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত প্রবৃদ্ধির দিক থেকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশগুলোর তালিকায় প্রথমদিকে স্থান দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের অবস্থান আরও সুসংহত হবে। স্বাভাবিকভাবেই একটা দেশকে উন্নয়ন করতে হলে শিল্পায়নে যেতে হবে। কিন্তুু, কৃষিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কৃষিটা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, কৃষির মধ্যদিয়েই আমাদের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিত হয়। দেশে এখন ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং ১৬ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ফোনের ১৩ কোটি সিম সংযোগ রয়েছে। এসব পণ্যতো আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। এখন দেশে কিছু কিছু অ্যাসেম্বিলিং হচ্ছে। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান এবং নতুন বছর সবার জন্য আরো উন্নতি এবং প্রগতি নিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বণিজ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *