২৪ ঘন্টায় ৯,৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত ১,৬০২ জন, মৃত্যু ২১
ঢাকা, ১৮ মে, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ৯,৭৮৮ টি নমুনা পরীক্ষায় দেশে ১,৬০২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন এ ভাইরাসে শনাক্ত ২৩ হাজার ৮৭০জন রোগী রয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ জন মারা গেছেন। এনিয়ে করোনায় মারা গেছেন ৩৪৯ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ২১২ জন। আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। শনাক্তের হিসাবে দেশে সুস্থতার হার ১৯ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ বলে তিনি জানান।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯,৯৩৩ টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৮,৫৭৩ টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৩৬০টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৪২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯,৭৮৮ টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৮,১১৪ টি। আজ গতকালের চেয়ে ১ হাজার ৬৭৪টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৬টি।
তিনি জানান, মৃতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, ৪ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৬, ঢাকা জেলায় ২, গোপালগঞ্জ ১, মুন্সীগঞ্জ ১, টাঙ্গাইল ১ ও মানিকগঞ্জের ১ জন রয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন। এরমধ্যে নোয়াখালীতে ১, চট্টগ্রামে ২, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১, কুমিল্লায় ১ ও ফেনীতে ২ জন রয়েছেন। সিলেটে ১ জন এবং রাজশাহী বিভাগে বগুড়ায় ১ জন রয়েছেন। ২১ জনের মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। আর বাসায় ৪ জনের। মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ২৩১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৩ হাজার ৩৮২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯৬ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ১৩৪টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৩ হাজার ১০০টি। ঢাকা সিটির বাইরে শয্যা রয়েছে ৬ হাজার ২৪টি। আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৩৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট আছে ১০২টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪১২ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৭ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৭৪১ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫০ হাজার ৮৮ জন। সারাদেশে ৬৪ জেলায় ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তৎক্ষণিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৭৬ হাজার ৭০৮টি। বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার ৫০০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৩ লাখ ২৮ হাজার ১২টি। বিতরণ হয়েছে ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৭২টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৪০টি পিপিই মজুদ রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮০টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৩টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১২ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ১৭৩ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ১২৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৯০ হাজার ১০২ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৭ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৩৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩১ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৫০ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৭ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৯৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৩৩৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯৫ জন। আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।