রাজারহাটে মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম
*মানবিক সহায়তা তালিকায় জন-প্রতিনিধিদের স্বজন, ভোটার ও স্বচ্ছলদের নাম*
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ১৮ মে, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কার্ডের তালিকা প্রনয়নে রাজারহাটে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজন ও বিত্তবানদের নাম তালিকাভূক্ত করায় কর্মসূচীর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত দরিদ্ররা। ফলে করোনা বিপর্যয়ে সরকারের মানবিক সহায়তা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,করোনা ভাইরাস মহামারিতে দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হতদরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তার অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা কর্মসূচী চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৮০৯৮টি হতদরিদ্র পরিবারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই কার্ডের তালিকা প্রনয়ন করা হয়।
সরেজমিন উপজেলার চাকির পশার ইউনিয়নের কানুয়া গ্রামে দেখা যায়, মহিলা ইউপি সদস্য রোকছানা বেগম তার ছেলে রাকিব হাসান, মেয়ে তাহমিনা, ভাতিজা মুরাদ হাসান, জাকির হোসেন, কামরুল ইসলাম, মাইদুল, ভাতিজি হালিমা, হালিমা-২ সহ নিজ স্বজনদের ৮জনের নাম তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। তারা সকলেই স্বচ্ছল। একই অবস্থা চাকিরপশার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বাদের তালিকায়।
রাজারহাট ইউনিয়নের কিসামত পূনঃকর গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী ও রেশন কার্ডধারী মহেন্দ্র নাথ, এবারে তার স্ত্রী জোনাকী রানীকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ওই গ্রামের প্রদীপ ও বিপ্লব ২ ভাইয়েরই নাম এসেছে তালিকায়।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মহুবর মেম্বারের বড় ছেলে আরিফ, ছোট ছেলে বিপ্লব, ভ্রাতৃ বধু আনজুমা বেগম, মেজো ভ্রাতৃ বধু কোহিনুর বেগম ও ছোট ভ্রাতৃ বধূ হালিমা বেগম সহ একই পরিবারের ৫জনের নাম জানা গেছে।
উমর মজিদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার রফিক মিয়ার ছোট ভ্রাতৃ বধু রাশেদা বেগম, ভাতিজা রতন সরকার, ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু ছায়েমের আত্মীয় স্বজন সহ একই পরিবারের ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম তালিকা করা হয়েছে। একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে। সরেজমিনে ৭টি ইউনিয়নের শতশত মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তালিকার প্রায় অর্ধেক নামই সরকারী একাধিক সুবিধাভোগী, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজন ও বিত্তবানদের নাম তালিকাভূক্ত করায় কর্মসূচীর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত দরিদ্ররা।
অপর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ৭ইউনিয়নের সুবিধাভোগীর তালিকা প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অনেকে এটিকে নাম সর্বস্ব তালিকা বলে পূনঃরায় তালিকার দাবী জানান।
এবিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্য রোকছানা বেগম বলেন, নিজেদের মধ্যে হলেও অস্বচ্ছল থাকতে পারেনা। অস্বচ্ছলদের নাম তালিকায় দেয়া হয়েছে।
মহুবর রহমান মেম্বার জানান, আমাদের বরাদ্দের নাম বাতিল করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবীন্দ্র নাথ কর্মকার প্রতিটি ওয়ার্ডে কৌশলে মেম্বারদের আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে আমাদেরকে সামজিকভাবে হেয় করছেন। এই তালিকার বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই বলে জানান।
ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবীন্দ্র নাথ কর্মকারের সাথে একাধিকার মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ যোবায়ের হোসেন জানান, স্বচ্ছল ও একাধিক সরকারী সুবিধাভোগী সমস্ত নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।