রাজারহাটে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ বাগান
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ২৭ এপ্রিল ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : “বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলার কাজলা দিদি কই”। কাজলা দিদিদের মুখে শোলক শুনতে এখন আর ছোট শিশুরা জেদ ধরে না। কারণ সময়ের আবর্তনে এসেছে টেলিভীশন, কম্পিউটার, ভিসিবি, ভিসিডি এবং ডিশ এন্ট্রেনার সুবাদে স্যাটেলাইট চ্যানেলে শিশুদের পছন্দসই রকমারী অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা। তেমনি আকাশে প্রতিদিন চাঁদ উঠে, কিন্তু বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ দেখা এখন যেন দূর্লভ ব্যাপার। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশ মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী হলেও আগের মতো রাজারহাট উপজেলা অহরহ আর বাঁশ বাগান নেই।
আধুনিক যুগে লোহা, প্লাষ্টিক, টিন, ইট, কাঠ এবং হার্ডবোড জাতীয় জিনিস সহজলভ্য ও কম মূল্যে পাওয়ার কারনে বাঁশের ব্যবহার কমেছে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে ঘন জন বসতি সহ দোকান পাঠ, কলকারখানা স্থাপিত হওয়ায় সংকুচিত হচ্ছে আবাদী ও পতিত জমি। একারণে বাঁশ বাগানও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঁশের প্রয়োজনীতা অপরিসীম।
গৃহস্থলি কাজে বাঁশের তৈরী ডালি, কুলা, মোড়া, চাটাই, ডোল, খড়ের ঘরের চাল, বেড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অনস্বীকার্য। অপর দিকে কাগজ শিল্পের অন্যতম উপাদান বাঁশ। এক সময় বাঁশ দ্বারা তৈরী কুটির শিল্পের রকমারী দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। কিন্তু কুটির শিল্পে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সহযোগীতা না থাকায় এখন কুটির শিল্পের নামটিও যেন হারানো স্মৃতি। ফলে রাজারহাট উপজেলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ বাগান।
প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষা ও ভূমি ক্ষয় রোধেও বাঁশ বাগানের গুরুত্ব কম নয়। কিন্তু বাঁশ বাগান করতে ব্যাপক স্থান ও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেই তুলনায় বাঁশ বিক্রি করে ন্যার্য মূল্য না পাওয়ায় চাষীরা বাঁশ বাগান করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
উপজেলার দিনোবাজার এলাকার বাঁশ বাগান মালিক দিনেশ, জগবন্ধু ও কমল জানান, সরকার বাঁশের তৈরী কুটির শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানীর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এবং ন্যার্য মূল্য নিশ্চিত করলে বাঁশ বাগান থেকে ভালো আয় হতো।