অনুসন্ধানী প্রতিবেদন- ঐতিহাসিক মনাকষার গুরুর হাটে চলছে হরিলুট ॥ গতবছরের তুলনায় অর্ধকোটি টাকা ধ্বস

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, শাহ্ আলম, ০৭ আগস্ট, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মনাকষা হাট নিয়ে চলছে হরিলুটের বাণিজ্য। নিলামে হাট বিক্রী না হওয়ায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তার দায়িত্বে খাস নামে স্থানীয়দের দ্বারা হাটের রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। আর এ রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক হারে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একে অপরকে দায়ী করছেন। সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

মনাকষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের এপ্রিল হতে জুলাই আমার দায়িত্বে খাস নামে স্থানীয় ১৪ জন লোকের মাধ্যমে সমগ্র মনাকষা বাজারের রাজস্ব আদায় করেছি। মোট ২ হাজার রশিদের
মধ্যে প্রায় ১৫৫০টি রশিদ ব্যবহার হয়েছে। তাহলে পরের হাটে রশিদের ক্রমিক নং ১৫৫১ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয়েছে ৩০০ নং এর পর থেকে।

প্রশ্ন হচ্ছে বিগত হাটগুলোতে বিক্রি হওয়া গরু-ছাগলের সাড়ে ১২০০ রশিদ কোথায় গেল? এমনটিই দেখা মিলেছে গত বৃহস্পতিবার গরু হাটে। এখানেই শেষ নয় সাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ের হাটটি তাদের দখলে। সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ডালিম মেম্বার নামীয় ছাড়পত্র। নিলাম ছাড়াই কিভাবে ব্যক্তি মালিকানায় হাট পরিচালনা হয় এর কোন উত্তর দিতে পারেনি সরকারী কর্মকর্তারা।

গরু-ছাগলসহ সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে। তাহলে পরের হাটে এপ্রিল মাসে ৯০ হাজার ৮০ টাকা, মে মাসে ১ লাখ ১১ হাজার ৯’শ ৮০ টাকা, জুন মাসে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১’শ টাকা ও জুলাই মাসে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা অর্থাৎ চার মাসে মোট  ৫ লাখ ২৪ হাজার ৮’শ ৮০ টাকা।

চলতি মাসের ২ তরিখ হাটটিতে কার মাধ্যমে কত টাকা আদায় হয়েছে সে বিষয়ে এ কর্মকর্তা কিছু জানেন না বলে জানান। তবে যারা রাজস্ব আদায় করেছে তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলামের
মাধ্যমে ও তার দেয়া রশিদ বইয়ের মাধ্যমে আমরা হাটের রাজস্ব আদায় করেছি।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাকে কোন প্রশ্ন না করে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে প্রশ্ন করেন। আমি কিছু জানিনা। একথায় আমি পরিস্থিতির শিকার। আমার কিছু করার নেই। কারা রয়েছে এর পিছনে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডালিম মেম্বার, সাধুসহ একটি বড় সিন্ডিকেট।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে ২ আগাস্ট যারা হাটের রাজস্ব আদায় করেছে তারা ভূয়া রশিদের মাধ্যমে আদায় করেছে। শুধু তাই নয় গরু ছাগল বিক্রীর ক্ষেত্রে হরিলুটের ন্যায় সাদা কাগজে খসড়া রশিদের মাধ্যমে ছাড় দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতিতে দুটি গ্রুপ থাকায় জোর যার মুলক তার নীতিতে মনাকষা হাটের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। হচ্ছে পুকুর চুরি। মাত্র কয়েকজন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতারা।

তবে জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে- ক্ষমতাশীন দলের নেতারা তাদের ব্যক্তিগত নামে গুরু-ছাগলের ছাড়পত্র না দিয়ে কেন সরকারী ছাড়পত্র ব্যবহার করছে? কেনই বা সরকারী হাট দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন ভূমি কর্মকর্তারা?

উল্লেখ্য যে,  গত বছরের হাট ইজারাদারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ খ্রী: এপ্রিল হতে  আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মনাকষা হাটে প্রতিদিনের বাজারসহ রাজস্ব আদায় হয়েছিল  ২২ লাখ টাকা। শুধু গরু হাট থেকেই আদায় হয়েছিল ২২ লাখ টাকা। আর হাটের ইজারা মূল্য ছিল  ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ভ্যাট ছিল ১৫% হারে ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং আয়কর ছিল ৫% হারে ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। মোট মূল্য ছিল  ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

২০১৬ খ্রী: হাটের ইজারা মূল্য ছিল ৫০ লাখ ৯১ হাজার টাকা, ১৫% হারে ভ্যাট ছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬’শ ৫০ টাকা এবং ৫% হারে আয়কর  ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫’শ ৫০ টাকা। মোট মূল্য ছিল ৬০ লাখ ৯৯ হাজার ২’শ টাকা। তাহলে এবছর কেন রাজস্ব আদায়ে ধ্বস? এ পর্যন্ত মোট  ৫ লাখ ২৪ হাজার ৮৮০ টাকা। তাহলে ঘাটতি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। আসলে কে দায়ী এর জন্য?

এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বরমান হোসেন জানান, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *