নরসিংদীতে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ, লহ্মিপুরায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ২৩ মে, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নরসিংদী জেলায় ৫ টি উপজেলা পলাশ, শিবপুর, (মনোহরদী-বেলাব),রায়পুরাও নরসিংদী সদর উপজেলা একসময় আবাদ হতো কাউন, এখন এই জেলায় বিলুপ্তি প্রায় কাউন চাষ।
শিবপুর উপজেলার কৃষক হাসেন আলী সাংবাদিকদের বলেন,আগে আমি কাউন চাষ করতাম। চাষ করে কাউনের খীর, পায়েস, খিচুরীও জাউ পাক করে খেতাম। এখন সেই স্বপ্নের কাউন`ই আর দেখিনা। বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ গ্রামের আঃজাব্বার বলেন, আমাদের এই গ্রামে সবাই মরিচ, আলু, সাকসবজির ফাকে ও চাষ করতো কাউন। সেই কাউন বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতাম। এই গ্রামে এখন কাউন চাষ আর দেখা যায় না।
চলতি রবি মৌসুমে কাউনের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় অতীতের কয়েক বছরের তুলনায় এবারে অনেক বেশী ফলন হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা কুলিয়ারচর উপজেলার লহ্মীপুরা ইউনিয়নের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়। ন
রসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার উত্তর শেষ প্রান্তে ও কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলা সদর থেকে দক্ষিন শেষে প্রান্তে অবস্থিত গ্রামটির নাম লহ্মীপুরা। এই গ্রামের মাঠ জুড়ে রয়েছে কাউনের বাগান। এখানে ৮০ শতাংশ জমিতে চাষকৃত কাউন দেখে স্থানীয় কৃষকরা বলেন, এবারে রৌদ্রের প্রখরতা বেশি থাকলেও কাউনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
লহ্মীপুরা গ্রামের সফল কৃষক সুনাই বেপারীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শুধু লহ্মীপুরা ইউনিয়নে নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাউনের চাষ করা হয়েছে। জমিতে অধিক ফলনশীল এবং এলাকার কৃষকদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে চাষ হয় কাউন।
কৃষক মোঃ আবদুস রাজ্জাক বলেন, এটি একটি লাভ জনক কৃষি পন্য। আমাদের দেশে চাষকৃত বিভিন্ন জাতের বীজের চেয়ে কাউনের আবাদ সহজ এবং অন্যদিকে লাভও বেশি। প্রতি কেজি ১শত থেকে ১শত ২০টাকা বিক্রি। তাই অনেক কৃষকই এবারের কাউন চাষ করেছে।
স্থানীয় কৃষক আক্কেল আলী, জামাল উদ্দিন, হাফিজ বেপারী বলেন, অল্প খরচে কাউন চাষ করা এবং অধিক ফলন পাওয়া যায়। এ এলাকায় সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান কৃষকদের উৎপাদিত পন্য ক্রয় করলে কৃষকরা লাভবান হতো এবং কাউনের চাষ বেড়ে যেত।
সরেজমিনে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা এখন ব্যস্ত রয়েছেন তাদের শেষ মুহূর্তের কাটার কাজে।অনেক গাছে ফুল পাঁকতে শুরু করেছে। বাজারে দাম ভাল থাকায় চাষীরা দিন দিন কাউন চাষে ঝূঁকে পড়েছে। তাই অন্যান্য ফসলের তুলনায় কাউন চাষে কম খরচ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কম হয় বলে এই আবাদে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
চাঁন মিয়া জানান, দো-আঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ মাটিতে কাউন বেশ ভাল জন্মে। পানি জমে না এমন জমিতে ১/২ বার চাষ দিয়ে বপন করতে হয় বীজ। বীজ বপনের পরে চারা গজানোর পরে জমিতে হালকা সার দিতে হয়। তবে বর্তমানে বাজারে দাম ভালো যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা কাউন চাষ করে নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে।
তবে সরকারী-বেসরকারি ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান কাউন কেনার আগ্রহী দেখালে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।