বগুড়ার শিবগঞ্জে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন, পুলিশে বখরা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): পুলিশের ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে বগুড়ার শিবগঞ্জে মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে স্কুল-কলেজ পড়ূয়া কিশোর থেকে শুরু উঠতি বয়সের যুবকেরা অন্ধকারে এগিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিক্রি ও সেবনে নারীদের আনাগোনা চোখে পড়ারমত।
মাদক নির্মূলে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যোগদানের এক মাসেই মাদক ও অপরাধ নির্মূলে একের পর সাফল্য অর্জন করে চলেছেন তিনি। মিডিয়ার চোখ এখন পুলিশের সাফল্যের দিকে। পুলিশ সুপারের কঠোরতার মধ্যেই শিবগঞ্জ উপজেলায় মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন। পুলিশকে বখরা দিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বিক্রি। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা-গাঁজা-ফেন্সিডিল। মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা গড়ে তুলেছেন শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক সোর্স জানায়, মাদক ব্যবসার আয়ের একটি অংশ থানার ওসিসহ থানা পুলিশের আরো দু-একজন অফিসারকে দিয়ে ব্যবসা চলছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত নিয়ে ওসির সাথে থানার অন্যান্য অফিসারদের মাঝেমধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনাও ঘটে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ফকির বলেন, থানার পুলিশ হলো শেয়ার হোল্ডার। পুলিশ সবার কাছ থেকে টাকা খায় আর যা খুশি তাই করছে। এখানে পুলিশ সুপারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
১৮/০২/২০১৮ ইং তারিখে পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অপরাধবিষয়ক ত্রৈমাসিক সভায় পুলিশের কর্মকর্তাদের আলোচনায় পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুনিয়রদের কাছ থেকে সিনিয়ররা যদি লজ্জা পেতে না চান, তাহলে এখনই সংশোধন হোন। তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া জেলাজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ। গত এক মাসে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করাসহ রাঘববোয়াল মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের ফলে বগুড়া শহরসহ কয়েকটি উপজেলায় মাদক কেনাবেচা অনেকটা কমে এসেছে। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের জিরো টলারেন্স নীতিকে সাধুবাদ জানিয়েছে বগুড়াবাসী।
তবে ব্যতিক্রম শিবগঞ্জ থানা। থানা পুলিশের রহস্যজনক নীরবতায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরণের মাদকদ্রব্য। ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও গাঁজার নেশায় ডুবে যাচ্ছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবৃত্ত পরিবারের সন্তানেরা। এ তালিকায় রয়েছে উঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল ও কলেজ ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী।
এতে করে উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যার ফলে ইভটিজিং, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও বখাটেপনা বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলাকে মাদক নির্মূল করতে পুলিশ সুপারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চান উপজেলাবাসী। পুলিশ সুপারের কাছে সচেতন মহলের দাবি কঠোর পদক্ষেপে উপজেলাকে মাদকমুক্ত করা হোক।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে পুলিশ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে অনেক মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসা করছে। টাকা দেওয়ার পরিমাণ কম হলেই বা টাকা দিতে গড়িমসি করলে এসব মাদক বিক্রেতাদের ধরে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
তবে আদালতে পাঠানোর সময় উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ কম দেখানোয় সহজেই জামিনে বের হয়ে আসে এবং আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করে আটককৃতরা। কিছু মাদক সেবীকে আটক করে আদালতে চালান করা হলেও ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে এমন অভিযোগ অনেকের। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চলে এমন মন্তব্য রয়েছে মানুষের মুখে মুখে।
উপজেলার বাসস্ট্যান্ড চত্বর এলাকা, কলেজের পিছন এলাকা, নাগর বন্দর, আমতলী, পীরব, মাঝিহট্ট, বুড়িগঞ্জ, মহাস্থান বন্দর, কিচক হাট এলাকা, গুজিয়া, দাড়িদহ, আটমুল, আলিয়ারহাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের একাধিক স্পটে অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদকের বেচা-কেনা।
যোগাযোগ করা হলে শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান (০১৭১৩-৩৭৪০৬২) ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে থানার ওসি (অপারেশন) জাহিদ হাসান মুঠোফোনে বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের কঠোর নির্দেশ রয়েছে। মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। কিছু মানুষের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলেই তারা কাল্পনিক মিথ্যা মন্তব্য করে।
মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে থানা পুলিশের সখ্যতার তথ্য সঠিক নয়। আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি, থানার ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে ওসি পর্যন্ত ১০০% ক্লিন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, যেকোন মুল্যে শিবগঞ্জ উপজেলাকে মাদক মুক্ত করা হবে।
ওসি (অপারেশন) জাহিদ হাসান বলেন, থানার ওসি থেকে শুরু করে সকল পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। আমরা সবসময় ইনজয় করি। কথাকাটাকাটির অভিযোগ ভিত্তিহীন। থানার অফিসারদের মধ্যে কোন্দল নেই, তবে যারা মন্তব্য করে এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কোন্দল থাকতে পারে।