নরসিংদীর বেলাব উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প, সরকারি পষ্টপষকতা পেলে এই শিল্প এ ভাবে ধংস হত না
নরসিংদী প্রতিনিধি, কে.এইচ.নজরুল ইসলাম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নরসিংদী জেলার সাবেক রায়পুরা থানা পরবর্তীতে মনোহরদী থানা বর্তমানে বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের সুটুরীয়া গ্রামের পালবাড়ার ইতিহাস ৫ শত বছরের পুরনো। আদিকাল থেকে পাল বংশীয়রা মাটি দিয়ে গৃহস্থলির দৈনন্দিন ব্যবহারের সমগ্রী হাড়ি, পাতিল, সরা, শানকি, মগ, বদনা, ঘটি, রা
কয়েক যুগ আগেও গ্রামের লোকেরা পালদের মাটির তৈরী সামগ্রী দিয়ে দৈনন্দিন গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজন মেটাত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এলুম্যানিয়ামের যুগে মাটির জিনিসপত্রের স্থান দখল করে নেয় এলুম্যানিয়ামেরর তৈরী হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কাসক, ঘটি-বাটি সহ ব্যবহার্য্য নানা সামগ্রী। তাই পালদের মৃৎশিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সুটুরীয়া পালপাড়া গিয়ে দেখা যায় বর্তমানে এখানে ৪৫টি পরিবার বসবাস করছে। অথচ প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পালপাড়া থেকে সুটুরিয়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা। যা চলাচলের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।
এলাকার শিহ্মার্থী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হাটে অনেক কষ্ট করে মেইন রাস্তায় উঠতে হয়। অধিকাংশ পরিবারের ভিটে মাটি ছাড়া আর কোন জমি-জামা নেই। কথা হয় মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত দেবচিত্র পা লের সাথে। তিনি জানান,তার ৩ শতক জমির বাড়িটি একমাত্র সম্বল। অভাবের তাড়নায় তার একমাত্র মেয়েকে অল্প বয়সে পাত্রস্থ করেছেন তিনি। ২ ছেলে কৈশরেই অন্য পেশায় যোগদান করেছে। এভাবে কথা হয় মৃত অতুল চন্দ্র পালের স্ত্রী ৭৫ বছর বয়সী ললীতা রানীর সাথে। ১৩ বছর বয়সে স্বামীর সংসারে আসেন তিনি। তার পর থেকে এ শিল্পের কাজ করে তার জীবন কাটে। আমার স্বামী মরেছে অনেক বছর হয়েছে আমার বিদবা ভাতা ও নাই বয়স্ক ভাতা নাই।
এর পর কথা হয় মৃত কামিনী চন্দ্র পালের স্ত্রী ৭৪ মিনতী রানীর সাথে আমি প্রায় ৬০ বছর দরে এই পেষায় আমার ১ ছেলে সে অন্য পেশায় কাজ করে। আমার সংসারের জন্য নিজে মাথায় করে মাটি কেটে এই কাজ করি আমরা বিদবা ভাতা ও নাই বয়স্ক ভাতা ও নাই মেম্বার আসলে বলে হবে এইটুক পর্যন্তই বলে। এ পাড়ার শ্রী পরিমল চন্দ্র পালের স্ত্রী মায়া রানী ৪০ বয়সী তিনি বলেন, আমার জন্ম এই পালপাড়ায় এটা আমার বাবার বাড়ি বাবা আমাকে এই কাজ শিখিয়েছেন এখন ও পর্যন্ত আমি এই কাজ করি।আমার ২ শতক জায়গা ছাড়া আর কিছুই নাই।
আমার দিকে এই এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান তারা আমাদের কোন খবর নেয়না। আমরা গরিব মানুষ কি করি কি খাই। এপাড়ার অজিত চন্দ্রপাল, শ্রী পরিমল চন্দ্র পাল, মদন চন্দ্র পাল, রবি চন্দ্র পাল, লবি রানী পাল, শৈল বালা পাল, সুমিত্রা রানী পাল ও রীনা রানী পাল জানান, তারা কোন রকমে বংশিয় পেশা ধরে রেখেছেন। বছরের শুষ্ক মৌসুম কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাস মৃৎশিল্পের কাজ করে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশত টাকা আয় করেন। বছরের বাকী সাত মাস মুজরী বিক্রি করে সংসার চালায় তাঁরা। টাকা পয়সার অভাবে তাঁরা তাদের ধমীয় উপাসনালয়টি পর্যন্ত সংষ্কার করতে পারছেন না।
একটি পাকা রাস্তা ও একটি ভাল মন্দির তৈরী করার তাদের মনের অনেক দিনের একটি লালিত স্বপ্ন। এ ব্যাপারে পাটুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইফরানুল হক ভূইয়া (জামান)বলেন, পালপাড়া থেকে বাদশা বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা ইটের ছলিংয়ের বাজেট হয়েছে। কথা হয় বিদবা ভাতা ও বয়স্ক ভাতার ব্যাপারে। তিনি বলেন, এব্যাপারে চলমান আছে। মৃৎশিল্প নিয়ে প্রশ্ন করিলে বলেন, এব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।
১ নং ওয়াডের জনপ্রতিনিধি জাকির হোসেন শাওন এর সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করিলে মোবাইল ফোনটি উঠাননি। ধীরেন্দ চন্দ্র পাল ও মিঠু চন্দ্র পাল বলেন সরকারি পষ্টপোষকতা পাওয়া গেলে তাদের এই রাস্তা ও শিল্প এভাবে ধংস হত না। সবাই এসে ছবি তুলে নিয়ে যায় তাদের দঃখ দুর্দশার কথা শোনে কিন্তু তাদের ভাগ্য পরির্বতনের জন্য সহযোগিতা ও এই এলাকার উন্নতির জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। এভাবেই আমরা সব দিক থেকে বন্ঞিত হয়ে আছি।