পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাঠানো হবে অনলাইনে, কেন্দ্রে ছাপিয়ে পরীক্ষা নিবেঃ বুয়েটের অধ্যাপক ড. সোহেল রহমান

ঢাকা, ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম  নিউজ ২৪) :  প্রশ্নপত্র স্থানীয়ভাবে কেন্দ্রেই ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এক স্থান থেকে সারা দেশের সব কেন্দ্রে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রশ্ন পাঠানো হবে। কেন্দ্রে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের সাহায্যে প্রশ্ন মুদ্রণ করে প্রশ্নপত্র দেয়া হবে পরীক্ষার্থীদের। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকার এই কাজের ভুলত্রুটি ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে চলতি বছর দুটি পরীক্ষায়, পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। এ কাজের জন্য উপকমিটিগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁস আমাদের বড় আকারে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতের প্রশ্ন ফাঁসের সব ঘটনা ও অভিযোগ পর্যালোচনা করে আমরা প্রশ্ন ছাপানো প্রক্রিয়ায় বড় আকারের পরিবর্তন আনি। আগে যেখানে ২১৮ জনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো, সেখানে কয়েক বছর ধরে ১৮ জনের অংশগ্রহণে প্রশ্নপত্র ছাপাচ্ছি। এর ফলে আগের রাতে বা তারও আগে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন ট্রেজারি থেকে যখন প্রশ্নপত্র শিক্ষকের হাতে তুলে দেই, এর পরই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে, সেখানেও কড়াকড়ি করে ফল তেমন একটা পাইনি। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপানোর বিকল্প এখন পর্যন্ত দেখছি না। এ কারণে আমরা সেদিকেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট ও প্রি-টেস্ট পরীক্ষা প্রশ্নব্যাংক থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রে নেয়া হবে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এ প্রক্রিয়া আমরা আগামী বছরের এসএসসিতে প্রয়োগ করব।

২০১৪ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়। গণিত প্রশ্ন তিনবার ফাঁস হয়।  তখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বর্তমান সচিব (তখন অতিরিক্ত সচিব) সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঐ কমিটির বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টিও ছিল।এই পদ্ধতির বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রহমান বলেন, ডিজিটাল বিপ্লব বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাতে এ পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়া বাংলাদেশের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু অবকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে।  হ্যাকারদের কবলে পাঠানো প্রশ্ন পড়ার আশঙ্কা থাকতেই পারে। তবে তাদের হাত থেকে রক্ষার কৌশলও আছে। প্রশ্নপত্র পাঠাতে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে। পাঠানো ডকুমেন্টটি হবে এনক্রিপটেড (পাসওয়ার্ড ছাড়া খুলবে না, খুললে সাদা পাতা দেখাবে) ফরমেটে পাঠাতে হবে। যে কক্ষে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে, সেটি এমনই সুরক্ষিত হবে যে, প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যে কোনো কেন্দ্রের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

সেজন্য সংশ্লিষ্ট কক্ষটি ওয়েবক্যাম ও সিসিটিভির অধীনে আনতে হবে। প্রশ্ন ছাপাতে উচ্চগতির প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা অবাধ রাখতে মডেম রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ টেলকো চ্যানেল ব্যবহার করা যায়। ওয়াইফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্কের খবর সবারই জানা। অপরদিকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিচ্ছিদ্র করতে প্রত্যেক কেন্দ্রে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে কয়েক সপ্তাহ আগে প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। ৩২ সেট প্রশ্নের মধ্যে আট সেট ছাপিয়ে লটারি করে বোর্ডগুলো নিজ নিজ কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়। কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আসে। তারা নিয়ে যান জেলা সদরের ট্রেজারিতে। পরীক্ষার ৩ দিন আগে উপজেলায় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় থানার ট্রেজারি বা ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। পরীক্ষার দিন সকালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেন্দ্র সচিবের প্রতিনিধি প্রশ্নপত্রের সিলগালা প্যাকেট পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যান। এক্ষেত্রে দূরত্বের ওপর নির্ভর করে ২-৩ ঘণ্টা আগেও প্রশ্নপত্র শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ঐ প্যাকেট খোলার নিয়ম। তবে অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে এর আগেই প্যাকেট খোলা হয়। বিশেষ করে গাড়িতে প্রশ্ন নেয়ার সময়ই অসাধু শিক্ষকরা প্যাকেট খুলে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে ফাঁস করে দেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *