ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌর বাসিন্দারা
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ০৯ অক্টোবর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ইউনিয়ন থেকে পৌরসভাতে উন্নিত হলেও পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়নি। পৌর সেবা নিয়ে দেশের বিভিন্ন পৌরবাসী আধুনিক জীবন যাপন করলেও সে সৌভাগ্য জোটেনি ফরিদগঞ্জ পৌরবাসীর কপালে। হোল্ডিং ট্যাক্স সহ বিভিন্ন ট্যাক্স আদায় হলেও সেবার বিষয়টি আধুরাই থেকে গেল।
প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তাগুলিতে সাবেক মেয়রদের আমলে বিদ্যুৎ লাইন নির্মান হলেও তাতে এখন আর জ¦লে না বাতি। সুপেয় পানির লাইনের কাজ দীর্ঘদিন যাবত চলমান থাকলেও স্বপ্নই রয়ে গেছে গ্যাসের ব্যবস্থা। এছাড়াও ফরিদগঞ্জ পৌরসদর এলাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌর শহরে বাসিন্দারা।
সদর এলাকার বাসস্ট্যান্ড, ফিসারী অফিস এলাকা, কেরোয়াব্রীজ এলাকা দিয়ে দুর্গন্ধের কারনে মানুষ হাটাচলা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলা সদর ও পৌরসভা সদরে প্রবেশের জন্য উল্লেখিত তিনিটিই প্রধান রাস্তা। কোন আগন্তুক কে স্বাগত জানানোর জন্যই প্রধান তিনিটি প্রবেশমুখে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ প্রতিনিয়ত রাখা হচ্ছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলির বর্জ থেকে সকল ধরনের ময়লা আবর্জনা উল্লেখিত স্থানগুলিতে ফেলা হয়। কখনও হাসপাতালে খালাস করা ভ্রূন ও বাচ্চাদের লাশ এখানে পাওয়া যায়।
দুর্ভাগ্য পৌরসভা গঠনের ১৭ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা। স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে, সরকারি-বেসরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীরাসহ পৌরবাসী। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয় পথচারীদের। এই দুর্গন্ধকে নিয়তি মেনে প্রতিদিন জনসাধারণের উপজেলার পৌর শহরে, গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি পুকুর পরিপূর্ণ হয়েছে ময়লা আবর্জনায়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তি রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাসহ ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিনপূর্বা ল হতে লোকজন পৌর সদরে চলাচল করে। আর একটি ময়লার ভাগাড় রয়েছে চাঁদপুর- লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স’র সামনে, এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নির্মিত এ ভবনটির। ব্যহত হচ্ছে কার্যক্রম। তৃত্বিয়টি রয়েছে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হতে সদরে প্রবেশের মুখেই। পৌরভবনের পিছনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে রয়েছে আরেকটি।
ফরিদগঞ্জ বাজারের পশ্চিম-উত্তর অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের মরদেহ দাহ করার স্থান মহাশস্মানের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে, এতে দুঃষিত হচ্ছে নদীর পানি বিলুপ্ত হতে বসেছে নদীর মাছ। সবগুলো ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে অসংখ্য মানুষের বসবাস। দুর্গন্ধ আর ময়লা-আবর্জনা ছড়াছড়িতে উল্লেখিত এলকার মানুষের বসবাস দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ছড়াচ্ছে রোগ জীবানু। এ বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও পৌরবাসীরপক্ষ থেকে বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। বিগত ১৭ বছরে তিনজন মেয়র নির্বাচিত হলেও কোন এক জনকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
কলেজ শিক্ষার্থী সোনালী আক্তার, বুশরা আক্তার, সাদ্দাম হোসেন, ঝুটনসহ অনেকেই বলেন, এখান দিয়ে কলেজে যাই। আবর্জনার দুর্গন্ধ ছাড়াও মশা-মাছি কীট-পতঙ্গ আর কুকুরের উপদ্রব তো রয়েছেই। আমাদের দাবি পৌরসভা খুব দ্রূত এর একটা সমাধান করবে।
বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর, মনির জাকির সহ প্রায় সকলেই বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাই কষ্টসাধ্য। স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন গাজী বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমার বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া পাই না। দুর্গন্ধে নিজেরাও থাকতে পারি না। নিজের বাড়ি ফেলে যেতে পারি না, তাই কষ্ট হলেও বসবাস করছি।
ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক ও সাধারন সম্পাদক বাবুল বলেন, ময়লার দূর্গন্ধের কারনে বাজার মুখি হচ্ছেনা মানুষ, আমরা মেয়র মহোদয়ের সাথে আলাপ করেছি বিষয়টি নিয়ে। আমরা আশা করি পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে পালানোর ব্যবস্থা করবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, পৌরসভার যে পরিমাণ ময়লা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে এতে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই বিপজ্জনক। যে কোনো সময়ে আশে-পাশে বসবাসকারীদের বড় ধরনের রোগ বালাই দেখা দিতে পারে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার রুমা বলেন, ময়লা আবর্জনার দূগর্ন্ধে আমাদের অফিসে আগত মৎস্য খামারিদেরসহ অফিস স্টাফদের অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে পৌরকর্তৃকেপক্ষকে লিখিত নোটিশ দিলেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ময়লা আবর্জার পানি আমাদের ফিসার্রীতে যায়। এতে মাছের রেনু মারা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ জানান, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে যে স্থানে পৌরসভার ময়লা ফেলা হচ্ছে, সেই স্থানটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সম্পত্তি। পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কোন সুরহা হয় নি। এখানে আমাদের দশ শতক সম্পত্তি রয়েছে। ইতি মধ্যে আমারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ওই স্থানে কৃষি তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সাথে ময়লা ফেলার জন্য নির্ধারিত একটি জায়গার বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা নতুন জায়গা পেলে সেখানে ময়লা রি-সাইকেল করতে পারবো। এতে আমাদের পৌরসভার পরিবেশ সুন্দর হবে। পরিচ্ছন্ন একটি পৌরসভা পৌরবাসীদের উপহার দিতে আমি সাধ্যমত কাজ করছি, এতে গণমাধ্যমসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।