নীলফামারীতে চটের ওপর বসে ক্লাস করতেও ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা
নীলফামারী প্রতিনিধি, মো. শাইখুল ইসলাম সাগর, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : নীলফামারীর জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা চর এলাকায় ১৯৯১ সালে ৪৬ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব ছাতুনামা আমিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। সে সময় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রতিষ্ঠানটি ছিল মুখরিত।
কিন্তু গত চার বছরে তিন বার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে বিদ্যালয়টি। সর্বশেষ ২০২০ সালের বন্যায় বিদ্যালয়টির একমাত্র টিনের ঘরটি কোনো রকমে রক্ষা করা সম্ভব হলেও আসবাবপত্র বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্পার বাধ সংলগ্ন বাঁধে অস্থায়ী ভাবে স্কুলের ঘরটি তোলা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৫ জন।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে আজকে ক্লাসে উপস্থিত আছেন দুই সিফট মিলে ৫০ জন এবং স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা ০৩ জন। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন বাঁধে একটি টিনের দোচালা ঘর তিন ভাগ করে তিনটি শ্রেণীকক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, ২২ জোড়া বেঞ্চ, ৮টি চেয়ার, ৪টি টেবিল ও ২টি পুরাতন স্টিলের আলমারি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তবে অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগেই সরানো হয়েছিল।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমুল রায় বলেন, আগে আমাদের স্কুল চরে ছিল। এখন বাঁধের ওপরে। এখন এখানেই ক্লাস করতে হবে। স্কুলে বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল না থাকলে প্রয়োজনে চটের ওপর ক্লাস করতেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। অপর এক ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মিনারা বলেন, দেড় বছর পর স্কুলে ক্লাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
এলাকাবাসী সামসুল ইসলাম, সফিয়ার রহমান, আজিজার রহমান বলেন, স্কুলের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় স্কুল ঘরটি রক্ষা পেয়েছে। ভাঙনের সময় সকলে নিজের ঘরবাড়ি বাঁচাতে মরিয়া ছিল। সে সময় অনুনয়-বিনয় করে নৌকার মালিকের কাছ থেকে নৌকা ও লোকজন নিয়ে শুধুমাত্র ঘরের টিন খুলে নিয়ে আসেন শিক্ষকরা। আসবাবপত্র গুলো চোখের সামনে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ১৯৯১ সালে বিদ্যলায়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথম নদী ভাঙনের কবলে পড়লে বিদ্যালয়টিকে মধ্য চরে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষে ২০২০ সালের নদী ভাঙনে স্থান পরিবর্তন করায় এখন স্কুলটি মূল জমি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বাঁধের ওপর স্থান পেয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মানতে বাঁধের ওপর ঘর তুলে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছি। শিশুদের মনোবল যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য পুরোনো টিনগুলো দিয়ে তিন কক্ষের ঘর তৈরি করছি। কিছু আসবাবপত্র সংগ্রহ ও তৈরি করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বারবার ভাঙনের কবলে পড়ে স্কুলটির অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার অন্যত্রে চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে নতুন করে স্কুল স্থাপনের কারণে নতুন শিক্ষার্থীও ভর্তি হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, চরের এ প্রতিষ্ঠানটি অনেক চেষ্টা করে চালু করেছি। স্কুলের মূল জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পাকা করণের অর্থ বারবার ফেরত যায়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে স্কুলটির জমি নেই, স্থানীয় কোনো ব্যক্তি জমি দান করলে বা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যদি সরকারি খাস জমি পাওয়া যায় তবে স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।