বগুড়ায় আ’লীগ নেতা আশরাফ এখন অপহরণ চক্রের দলনেতা
বগুড়া জেলা প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রথমে গাছ বেচা-বিক্রিতে কাঠুরিয়া, পরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, এরপর দালাল খ্যাতি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ১নং বুড়ইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী (আওয়ামীলীগ মনোনীত) দালাল খ্যাত কাঠুরিয়া আশরাফ আলী এখন অপহরণ চক্রের দলনেতা। অপহরণ, সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখল, জমিসহ বিভিন্ন মামলার দালালি ও নানা অপকর্মে জর্জরিত আওয়ামীলীগ নেতা আশরাফ। একটি অপহরণের ঘটনায় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে অবশেষে ফেঁসে গেলেন কাঠুরিয়া আশরাফ। নন্দীগ্রাম থানা ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ আশরাফ আলীকে গ্রেফতার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। পুলিশের তৎপরতার খবরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আশরাফ। তাকে গ্রেফতারে দফায় দফায় অভিযানে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে কাঠুরিয়া আশরাফ আলী। পুলিশের নামে কুৎসা রটানোসহ থানায় কেউ মামলা দায়ের করলেই অপতৎপরতা শুরু করে দালাল খ্যাত এই আশরাফ। কতিপয় কিছু ব্যক্তির ছত্রছায়ায় দৌরাত্ম বেড়েছিল আশরাফের। গত শনিবার নারীর প্রলোভনে গাইবান্ধার সাঘাটার দুই ব্যবসায়ীকে বগুড়ার শাজাহানপুর এলাকা থেকে অপহরণনের পর রোববার ভোর রাতে নন্দীগ্রাম সদরে আওয়ামীলীগ নেতা কাঠুরিয়া আশরাফ আলীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার শিমুলতলা গ্রামের মৃত-খতিবুল্লাহ বেপারির ছেলে ধান চাল ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম (৫২) ও একই গ্রামের মৃত-নুরুল হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেনকে (৫২) নারীর প্রলোভনে শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা মোড়ে ডেকে এনে কৌশলে অপহরণ করে নন্দীগ্রাম উপজেলা পৌর সদরের টিএমএসএস অফিসের ২য় তলায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এরপর অপহরণ চক্রের দলনেতা কাঠুরিয়া আশরাফ আলী সেখানে গিয়ে তার স্ত্রী জয়নাব খাতুন জয়াকে দিয়ে অপহৃতদের সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজের অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলে ধারন করে। ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অপহৃতদের কাছে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আওয়ামীলীগ নেতা কাঠুরিয়া আশরাফ। অপহৃত আব্দুল হালিমের মোবাইল ফোন দিয়ে তারই ভাগিনা শাহ আলমের কাছে মুক্তিপণের টাকা আনতে বলে অপহরণকারীরা। অন্যথায় অপহৃতদের হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলেও হুমকি দেয়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর কবির জানান, শনিবার রাতে অপহৃতের ভাগিনা শাহ আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫/৬জনকে আসামি করে শাজাহানপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে মুক্তিপণের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। অপহরণকারীদের টাকা দেওয়া হবে জানালে চক্রটি নন্দীগ্রাম ফিলিং স্টেশন পাম্পের সামনে টাকা নিয়ে আসতে বলে। কথামত রোববার গভীর রাতে টাকা নিয়ে পাম্পের সামনে গেলে সেখানে অপহরণ চক্রের সদস্য মুকুল শেখ টাকা নিতে আসলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে পাম্পের পাশেই অপহরণ চক্রের দলনেতা আওয়ামীলীগ নেতা কাঠুরিয়া আশরাফ আলীর বাড়ি থেকে অপহৃত দুই ব্যবাসায়ীকে উদ্ধার করাসহ চক্রের নারী নেত্রী জয়নাব খাতুন জয়া (আশরাফের স্ত্রী) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টেরপেয়ে আশরাফ আলী সটকে পড়ে।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপহরন চক্রের অপর সদস্য রানী, রিনা খাতুন ও জোসনাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নন্দীগ্রাম সদরের ফিলিং স্টেশন পাম্প এলাকার অপহরণ চক্রের দলনেতা আওয়ামীলীগ নেতা কাঠুরিয়া আশরাফ আলীর স্ত্রী জয়নব জয়া (৩০), পৌর এলাকার ঢাকইর গ্রামের মৃত আবুল সরকারের মেয়ে জোসনা (৩৬), উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত অছিম উদ্দিনের ছেলে মুকুল শেখ (২৮), চকপাড়া গ্রামের ইউসুব আলীর স্ত্রী রিনা বেগম (২২), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ প্রধানপাড়ার রেজাউল করিমের স্ত্রী রানী বেগম (৩৮)।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর কবির জানান, সোমবার বিকালে অপহরণ চক্রের দলনেতা আওয়ামীলীগ নেতা কাঠুরিয়া আশরাফ আলীর বিউটি পার্লারে তল্লাসী চালিয়ে কিছু নন-স্ট্যাম্প (সাদা)সহ নানা অপকর্মের কাগজপত্র জব্ব করা হয়েছে। আশরাফ আলীকে যেকোন মুল্যে গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ।