পাঁচবিবিতে স্বেচ্ছাশ্রমে করা রাস্তার কাজকে কাবিখা প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি, আল জাবির, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সড়াইল টু বড়াইল রাস্তার মাটি কাটার কাজ এলকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে করলেও কাবিখার ৭.৩১০ মেট্রিক টন গমের টাকা প্রকল্প সভাপতি এলাকার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হবিবর রহমান আত্মসাৎ করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে কয়েকবার অবগত করার পরও অদৃশ্য কারনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় সড়াইল হতে বড়াইল ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত মাটি কাটার জন্য কাবিখার (সাধারন) ৭.৩১০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার সরকারী মূল্য প্রতি টন ৩১,৩৭৯ (এক ত্রিশ হাজার তিন শত উনআশি) টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে উক্ত রাস্তাটির মাটি কাটার জন্য প্রকল্প বরাদ্দ হওয়ার আগেই এলাকাবাসী চলাচলের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে এই কাজটি করেছে। সরকারি নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এই প্রকল্পটি চলতি বছরের ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
কিন্তু এলাকাবাসী জানায়, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে আমন ধান কাটার পর মাটি কাটা হয়েছে। মাটি কাটায় অংশ গ্রহনকারী বড়াইল গ্রামের মৃত রজব আলীর পুত্র তয়েজ উদ্দিন সরকার, সেকেন্দারের পুত্র নাজির হোসেন, মোকলেছের পুত্র শফিকুল, নুরনবীর পুত্র হাবিব সহ গ্রামবাসী, হাফেজ রবিউল ইসলাম, ছামিরুল ইসলামের স্ত্রী সালমা বেগম ছাড়া ও ৪ দফায় অর্ধশতাধিক ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় রাস্তাটির সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটিতে মাটি কাটে এবং নিজের বাড়ি থেকে চাল দিয়ে খিচুড়ি পাক করে খেয়েছে।
এ সময়ে চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোক দিয়ে রাস্তার পাশের একটি গর্ত থেকে কিছু মাটি কেটে রাস্তায় দেয়। উক্ত মাটি সমান করা সহ মাটি কাটার কাজ স্থানীয়রাই স্বেচ্ছাশ্রমে সব কাজ করে। কাজ করার সময় শুধুমাত্র ৩ দিন দুপুরে এলাকার মেম্বারের উদ্যেগে খিচুড়ির জন্য গ্রাম থেকে উঠানো চাল রান্না করতে সহযোগীতা করা হয়। তারা জানত না পরবর্তীতে এই রাস্তার জন্য প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান হবিবর রহমান এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রাস্তায় স্বেচ্ছা শ্রমে মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন এবং নিজেও কিছু মাটি কাটার দাবি করেন। এ ব্যাপারে তথ্য নিতে যাওয়া সাংবাদিকদেরকে নিউজ না করার জন্য তিনি ম্যানেজ করতে চেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক ব্যাক্তি বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে প্রকল্প এলাকায় প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক কাজ শেষে তদন্তের জন্য প্রকল্প কর্মকর্তা নিজে না গিয়ে তার ছোট ভাই সুলতানকে দিয়ে কাজ করান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূর-এ শেফা এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার কথা তিনি জানেন না। আর প্রকল্প পাস হওয়ার আগে কাজ করার কোনো নিয়ম নাই। প্রকল্প পাসের আগে মাটি কাটা থাকলেও তা আমলে নেওয়া হবে না। প্রকল্পের জন্য জামানত হিসেবে বিডি জমা নেওয়া হয়েছে। কাজ শেষে তদন্ত পূর্বক বাকী বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
তিনি আর ও বলেন, আমার ভাই আমাকে মোটর সাইকেলে করে নিয়ে প্রকল্প এলাকায় যায় তাকে এসব কাজে পাঠানো হয় না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরমান হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। অনিয়ম থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।