বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভে সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত
সংসদ ভবন, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো থেকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭(১) বিধিতে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করায় ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানানো হয়। প্রস্তাব উত্থাপন করে সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব বরেণ্য নেতা, তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য ভাষণ। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ছিল অত্যন্ত প্রত্যাশিত। বঙ্গবন্ধুর অলিখিত ১৮ মিনিটের এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। পৃথিবীর অন্য কোন ভাষণ এতোবার উচ্চারিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কেবল বাঙালি জাতিকে আলোড়িত করেনি বরং বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি তারই প্রমাণ। বঙ্গবন্ধু জানতেন পাকিস্তান সশস্ত্র অবস্থায় গোলা-বারুদ নিয়ে এদেশের মানুষের ওপর হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, এটা জেনেও অত্যন্ত কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই ভাষণ আমরা প্রচার করতে চাইলে মাইক কেড়ে নেয়া হতো। রেডিও-টেলিভিশনে এই ভাষণ উচ্চারিত হতো না। এই ভাষণ প্রচার করার অপরাধে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আজ এই ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম আসন দখল করে নিয়েছে। আলোচনায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ায় সমগ্র জাতির সাথে আমরাও আনন্দিত। এজন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই ভাষণ বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল, জাতিকে উপহার দিয়েছে স্বাধীনতা। এটি শুধু বাঙালির নয়, সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্ব সভায় বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু আরো একবার সম্মানিত করেছেন। তিনি জন্মেছিলেন বলেই একটি স্বাধীন দেশ ও পতাকা পেয়েছে বাঙালি জাতি।
সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি দেশের ইতিহাসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সেদিন ৭ মার্চের সমাবেশে গিয়েছিলাম একজন শ্রোতা হিসেবে, ফিরে এসেছি একজন যোদ্ধা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তেমনিভাবে ৭ মার্চের স্মৃতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে শিশু পার্ক করার মধ্য দিয়ে। কতটা জঘন্য হলে মানুষ এমনটা করতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধর ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইউনেস্কোর প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি না দিলেও এই ভাষণ বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীর জন্য একটি পবিত্র গ্রন্থের সমতুল্য। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, আমরা যেটিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে অনেক সময় নিয়েছি, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন করায় এখন তা শুধু আমাদের নয় সারাবিশ্বের অনেক দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে। সারা বিশ্বের শিশুরা জানতে পারবে এটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ভাষণ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ এক সময় বাঙালির ছিল, এটি এখন বিশ্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে দ্রুপদী সঙ্গীতের সঙ্গে তুলনা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অমর কাব্যের মহাকবি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরন্তর প্রেরণার উৎস। আজও এই ভাষণ সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার জন্যে ৭ মার্চের ভাষণে রণনীতি ও রণকৌশল ছিল। ভাষণের অন্তর্নিহিত দিকটি দেখলে দেখা যাবে, নিখুঁতভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ সাজিয়েছেন, অপূর্বভাবে স্বশাসন ও স্বাধীনতা অর্জনে এই ভাষণ প্রেরণা যুগিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নয়, বঙ্গবন্ধু একটি পতাকা, একটি স্বাধীনতা ও একটি জাতির স্থপতি।
বিএনএফ সদস্য এসএম আবুল কালাম আজাদ ৭ মার্চের ভাষণকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আব্দুল মতিন খসরু, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, অধ্যাপক আলী আশরাফ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মৃনাল কান্তি দাস, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, সাগুফতা ইয়াসমিন, শামসুল হক টুকু, ইসরাফিল আলম, বিএম মোজাম্মেল হক, পঙ্কজ নাথ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, কাজী নাবিল আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, ডা. এনামুর রহমান, তাজুল ইসলাম, মেজর (অব.) এটিএম আব্দুল ওহাব, এনামুল হক, নুরুন্নবী চৌধুরী, মো. মোসলেম উদ্দিন, উম্মে রাজিয়া কাজল, আক্তার জাহান, তালুকদার মো, ইউনুস, সাবিনা আক্তার তুহিন ও জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল ও স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।