সুমির ভবিষ্যত লিয়্যা ভাবিচ্চি, এ্যাকাউন্ট খুলে দেন
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ট্রাক চাপায় হাত হারানো ৮ বছরের শিশু সুমির সার্বক্ষনিক খোঁজ রাখছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ চিকিৎসকরা।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশু সুমি। হাত হারানো শিশুটির চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে যান সংবাদকর্মীরা। এসময় ঘুমিয়ে ছিল অবুঝ ওই শিশুটি। হাতের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমের ঘোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে সুমি। ব্যথায় হাত নাড়াতে পারে না। হাত নেই মনে হলেই ছলছল চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। ক্যামেরা হাতে সংবাদকর্মীদের দেখে সুমির মা মরিয়ম বেগম ও চাচি পারুল আবারো কেঁদে উঠলেন।
সুমির মা কেঁদে কেঁদে বলেন, ভাই আপনেরা হামার মেয়েডার সমবাদ লেকিচেন। মুন্ত্রী সাহেবের (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) কতাও লেকিচেন। সত্যি লেকিচেন, এইজন্যে সগগলে হামার মেয়েক দেকবের আচচে। খবর লিচ্ছে, চিকিসসা ভালো হচ্ছে। হামরা গরীব মানুষ, এই জেলার বড় স্যার (ডিসি), পুলিশের বড় স্যার (এসপি), হামাকেরে ডাবলু ভাই (জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক) সহ মেলা বড়বড় মানুষ টেকা দিয়ে সহযোগিতা করিচ্ছে। আপনেরা হামাকেরে অনেক উপুকার করিচেন।
সুমির মা মরিয়ম বেগম আরও বলেন, ডাক্তার স্যারেরা সবসময় খেয়াল রাকিচ্চে, হামার সুমি নাকি তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠবি। ডিসি স্যার আর এসপি স্যার বলিছে আমার মেয়েক ঢাকা লিয়্যা যাবি, একটা পেলাস্টিকের হাত লাগে দিবি। হামার মেয়েডার জন্যে সগগলে ভাবিচ্চে, হামরা গরীব হলেও আজ অসহায় নাই, সগগলে হামাকেরে পাশে আচে।
সুমির চাচি পারুল বলেন, হামাকেরে মেয়েডার চিকিসসার জন্যে অনেক ভালো মানুষ টেকা দিচ্ছে। সেই টেকা হামরা সুমির নামে একটা ব্যাং (ব্যাংক) একাউন (এ্যাকাউন্ট) করবের চাই। কেংকা করে করমু, হামরা মুরখ সুরখ মানুষ। আপনেরা পেপারে এডে এনা লেখে দেন। হামরা সুমির ভবিষ্যত লিয়্যা ভাবিচ্চি। ভাই দয়া করে ব্যাং একাউন খোলার ব্যবস্তা করে দেন।
পারুল বলেন, সুমি বার বার ওর মাকে বলিচ্ছে, মা হামার হাত কই, ডাক্তারে হাত খুলে রাকিছে। এখন সুমির প্রশ্নের উত্তর দেবে কে ? সুমির কথা ভেবে শোকে পাথর হয়ে গেছে সুমির মা এবং বাবা। ভাবছেন আদরের সন্তানটির পরিণতির কথা। মেয়ের পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুমির চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার সার্বিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে। তার নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে। রক্তের স্বল্পতা থাকলেও সেটি হাসপাতালের চিকিৎকরা স্বেচ্ছায় রক্ত প্রদান করছেন। তার বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং ডান হাত ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। ডান হাতের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে সুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।
সুমির অবস্থা আগের থেকে ভাল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাত হারানো শিশু সুমি খাতুন কৃত্রিম হাত পাচ্ছে। দুর্ঘটনায় আঘাতের ক্ষত শুকানোর পর তার কৃত্রিম হাত সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, গরিব বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসার খরচ জোগানো সম্ভব না হলেও শিশুটিকে সুস্থ করে তোলার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
মাসখানেকের মধ্যে শিশুটির কাটা পড়া বাম হাতের আরেক দফা অস্ত্রোপচার করতে হবে। এরপর কৃত্রিম হাত সংযোজনের জন্য তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। এই কৃত্রিম হাত সংযোজনের জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা লাগবে। বগুড়া জেলা প্রশাসন এই অর্থের ব্যবস্থা করবে। তবে সুমির কৃত্রিম হাত সংযোজনের জন্য সহযোগিতা প্রদানে ইচ্ছুক যে কেউ জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করতে পারেন।
এদিকে, হাত হারানো শিশু সুমিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম। তিনি শিশুটির চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং শিশুটির বাবার কাছে নগদ ১৫ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন।
সমাজ সেবার কল্যাণ তহবিল থেকে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে যান। তিনি ঐ শিশুর মায়ের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেছেন। ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় শিশুটির একটি হাতের অর্ধেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সুমির বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ফুলতলা দক্ষিনপাড়া। মায়ের নাম মরিয়ম এবং বাবা ভ্যান চালক দুলাল খাঁ।