সাতক্ষীরার দেবহাটায় চালক হত্যা : ইজিবাইক উদ্ধার ও আরেক আসামি আটক
সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি, হেলালউদ্দীন, ১০ জুলাই, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : সাতক্ষীরা দেবহাটায় চাঞ্চল্যকর ইজিবাইক চালক হত্যার ঘটনায় নিহত মনিরুলের খোয়া যাওয়া ইজিবাইকটিসহ আরো ১ আসামীকে গ্রেফতার করেছে দেবহাটা থানা পুলিশ। দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা ও উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পরিদর্শক(তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র এক অভিযান পরিচালনা করে উক্ত মামলার আসামী সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সোনাটিকারী গ্রামের মৃত শহর আলী সরদারের ছেলে রমজান আলী (৪০) কে শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে দেবহাটার গাজীরহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন।
পরে রমজানের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক উপজেলার কামটা গ্রামের মৃত সনৎ সেন গুপ্তের ছেলে কৌশিক সেন গুপ্তের পুকুর থেকে ও কামটা গ্রামের হাঁসড়াতলা সমাধীস্থলের পাশের একটি বাগান থেকে ছিন্ন ভিন্ন করা অবস্থায় নিহত মনিরুলের ব্যবহ্নত ইজিবাইকটি উদ্ধার করেন। এর আগে গত ২ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিলাস মন্ডলের কাছে নিহত ইজিবাইক চালকমনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ও রাবেয়ার প্রেমিক উপজেলার কামটা গ্রামের ওহাব সরদারের ছেলে সাইদুর রহমান রাজু পৃথক পৃথকভাবে ১৬৪ ধারা মতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়ার সাশে রাজুর অবৈধ সম্পর্কের কারনে তারা উভয়ে প্লানিং করে মনিরুলকে হত্যা করেছে বলে তারা আদালতকে জানায়। আদালতে মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে জানায়, মনিরুলের বন্ধু রাজু তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সূত্র ধরে তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হলে রাজু রাবেয়াকে বিয়ে করার কথা বলে। কিন্তু রাবেয়া তার স্বামী থাকতে তার সাথে বিয়ে করা সম্ভব নয় জানায়। গত ২৫ জুন ২০২০ ইং তারিখে ভোরে সাংসারিক বিরোধে মনিরুল রাবেয়াকে মারপিট করলে সকাল ১০ টার দিকে রাবেয়া রাজুকে গাজীরহাট বাজারে যেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মনিরুল কর্তৃক তাকে মারপিটের কথা জানায়।
এতে রাজু প্রচন্ড রেগে গিয়ে ঐদিনই মনিরুলকে হত্যা করার কথা জানায়। পরে তাদের প্লানিং মতো রাজু সন্ধ্যার সময় রাবেয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে মনিরুলের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দেবহাটায় যেয়ে মনিরুলকে হত্যা করে। এছাড়া সাইদুর রহমান রাজু তার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে বলে, রমজান নামে এক জনকে সাথে নিয়ে সে দেবহাটাতে আসে। রমজান মনিরুলের ইজিবাইকে যায় আর রাজু মোটর সাইকেলে করে দেবহাটায় যেয়ে বৌদির দোকানের সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে। আগে থেকে রাজু দড়ি কিনে কাছে রেখে দেয়। পরে তারা এক হয়ে মনিরুলের ইজিবাইকে সখিপুরের দিকে আসার সময় সখিপুরের চাতালের কাছে এসে পিছন দিক থেকে দড়ির ফাস দিয়ে ২ জনে মিলে জোরে টান দেয়।
এতে মনিরুল হাত পা ছোটাছুটি করতে থাকে এবং একপর্যায়ে হাত পা নিথর হয়ে পড়লে রাজু ইজিবাইক থেকে দ্রুত নেমে সখিপুরের দিকে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় একটি ব্যাটারি ভ্যানে করে সখিপুরে চলে যায়। সখিপুর মোড় থেকে সে মোটর সাইকেলে গাজীরহাট চলে যায়। যাওয়ার সময় রাজু রমজানকে বলে যায়, যেহেতু এলাকাটা তার তাই লোকজন তাকে চিনে ফেলতে পারে। রমজান যা পারে তাই করে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার কথা বলে। পরে রমজান মনিরুলের লাশটা রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবহাটা থানার ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র সেসময় সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিলেন, মামলার তদন্ত এখনো চলমান। যতটুকু ক্লু উদঘাটন করা হয়েছে তার থেকে প্রতিয়মান হত্যাটি প্রেমঘটিত কারনে পূর্ব পরিকল্পিত। তবে তদন্ত এখনো অব্যাহত আছে। উজ্জ্বল কুমার মৈত্রের দেয়া তথ্য মতে মামলার তদন্ত চলমানের অংশ হিসেবে শুক্রবার ১০ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে রমজানকে গ্রেফতার ও নিহত মনিরুলের খোয়া যাওয়া ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হলো। দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা এমন একটি স্পর্শকাতর মামলার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা এবং খুব অল্প সময়ে মামলার ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন ২০২০ ইং তারিখ শুক্রবার ভোরে দেবহাটা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাঈল গাজীর ছেলে ইজিবাইক চালক মনিরুল ইসলাম (৩৩) এর লাশ উদ্ধার করে দেবহাটা থানা পুলিশ। পরে নিহত মনিরুলের ভাই উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাঈল গাজীর ছেলে আমিনুর রহমান (২২) বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় ২৬-০৬-২০২০ ইং তারিখে ৩০২/৩৯৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় ০৯ নং মামলা দায়ের করেন।