সবশ্রেণীর মানুষদের সুরক্ষায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জনগণ ও দেশের অর্থনীতিকে করোনাভাইরাস মহামারী সৃষ্ট সংকট থেকে বাঁচাতেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার আমরা ঘোষণা দিয়েছি। এটা শুধু আজকের জন্য নয়, আমাদের এখনকার যে সমস্যা সেটা সমাধান করা এবং আগামী ৩ অর্থবছর পর্যন্ত যে পরিকল্পনা সেটা বাস্তবায়ন করা। যাতে এই করোনাভাইরাসের সময়টা পার করে আপনারা আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু আবার চালাতে পারেন। যেটা সব শ্রেণীর মানুষ পাবে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এবং সেই সুযোগটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ৩ বছর মেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছি। আশাকরি এই অবস্থার আমরা উত্তোরণ ঘটাতে পারবো। শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর ত্রাণ ও তহবিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যক্তি বিশেষের অনুদান গ্রহণকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ভাষণ প্রদান দেন। তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও তে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের একেবারে নিন্ম আয়ের মানুষ- আমাদের দিন মজুর শ্রেণী কামার-কুমার, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদারগণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি এবং প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই প্রণোদণার ঘোষণা দিয়েছি। সব শিল্প- কলকারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতে চালু থাকে। আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এই প্রণোদণার খাতে আমরা ব্যয় করবো বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আজকের যে অর্থনৈতিক মন্দা সেটা বিশ্বব্যাপীই দেখা দেবে,সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেজন্য বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করার জন্যই আমরা খাদ্য উৎপাদনে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষা করতে হবে। এজন্যই বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা, জনসমাগম যেখানে সেখানে না যাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সকলকে পালন করতে হবে। যদিও খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রেনীর এবং ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট হচ্ছে,তাঁদের জন্য সময়টা খুব দু:সময়, সেটা আমি বুঝতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমরা আমাদের লক্ষ্য, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে আমর অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলাম। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছিল। এই করোনাভাইরাস আসার পরই অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা কিছুটা শ্লথ হয়ে গিয়েছে উল্লেখ করেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপীই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমগ্র বিশ্বই বলতে গেলে স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কাজে যে কোন অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, আমি জানি ত্রাণ সরররাহের কাজে যোগ দেয়া এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের এটাই যেন প্রফেশন হয়ে যায় এবং ত্রাণ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে রকম যেন না হয় বরং ত্রাণ যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাই আমরা নিতে যাচ্ছি এবং নিব। এই রিলিফ দিতে কোন সমস্যা হলেই তিনি সাথে সাথেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বেশি জায়গায় নয় দেশে সাড়ে ৪ হাজারের মত ইউনিয়ন হলেও পাঁচ-সাতটি জায়গায় এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। রিলিফ দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেব। কারণ গরিবদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যের কেউ অপব্যবহার করবে এটা আমরা কখনোই বরদাশত করবোনা। সে আমার দলেই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় এই দু:সময়ে জনগণের পাশে না থেকে কেবল সমালোচনার স্বার্থে সমালোচনাকারী রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় সূধী সমাজের ব্যক্তি বিশেষের কঠোর সমালোচনা করেন। দুর্ভাগ্য হলো আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অনেক দল বা সূধী সমাজ অনেকেই, অথচ তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। সমালোচনাতেই ব্যস্ত। দেখা গেল পাঁচ-সাতটি জায়গার যে সমস্যা তা নিয়েই তারা চিৎকার করে যাচ্ছেন। কেউ কিন্তু একটা মানুষকেও একটি পয়সা দিয়ে সাহায্য করছেন না বা তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কিন্তু তাদের কথাটা বিক্রি করেই যাচ্ছেন। এ ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বিক্রি করে যাবে, এটাই তাদের ব্যবসা। এটাই তারা করে যাচ্ছেন। আমি বলবো বেশি কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। এই দু:খের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এত কথা না বলে মানুষকে কতটুকু দিলেন সেই হিসেবটা দেন মানুষের কাছে,’যোগ করেন তিনি। আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সেটা আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী আমাদের আওয়ামী লীগের যে নেতা-কর্মী তাদেরকেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি। তাঁরাও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারী ভাবে যা দেয়া হচ্ছে পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে যে যতটুকু পারছেন সাহায্য করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাঁর সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি গরিব,দু:খী মেহনতি জনগণের দৈনিক অন্ন সংস্থানে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সাধারণ মানুষকে যেমন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তেমনি ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। এজন্য যারা তালিকার বাইরে রয়েছে তাঁদের জন্য আমরা কার্ড তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তা পায় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে পারে। আমরা রাতের বেলাতেও বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি যাতে খাবারের জন্য সবাই এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা ভিড় করতে না পারে। যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে না পারে। তিনি এ সময় সমাজের বিত্তবানরা যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা যেন সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করেন। যাতে লোক সমাগম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখারও তিনি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিযেছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তাঁদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে সকলেই পাবে।আজকের যে দু:সময় সেটা একদিন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ আবারো এগিয়ে যাবে এবং এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। আপনারা যে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তা মানুষের কল্যাণের কাজে লাগবে। সেজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সীমিত ভাবে, সুরক্ষিত থেকে কাজ করে যান। আমাদের অর্থনীতি যেন স্থবির না হয়ে যায় এবং গতিশীলতা বজায় থাকে, সেভাবেই আমাদের সকলকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এদিন যারা অনুদান প্রদান করেন তাঁরা হচ্ছেন- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কাশেম ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশন, বিসিএস কর এসোসিয়েশন, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) ঢাকা ক্লাব, বিএসআরএম গ্রুপ, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, উত্তরা গ্রুপ, টেক্সকোটেক, হামদর্দ ফাউন্ডেশন, গান বাংলা,শাওমি টেকনোলজি বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানী টি লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, ওলিয়া গ্যাস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি), ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন (ইইডি), চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এবং বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি। একইসঙ্গে জিল্লুল হাকিম এমপি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেন।