রাজারহাটের খাল, বিল ও জলাশয়ে অবাধে দেশীয় পোনা নিধন চলছে
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, ইব্রাহিম আলম সবুজ, ৩১ মে, ২০২০ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে খাল, বিল, জলাশয় ও প্লাবন ভূমি গুলোতে অবাধে মৎস্য পোনা নিধন চললেও উপজেলা মৎস্য বিভাগ কোন ভূমিকা রাখছে না। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের খাল, বিল, জলাশয় ও প্লাবন ভূমি গুলোতে কারেন্ট জাল, হ্যাঙ্গা জাল, ডারকি সহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির পোনা মাছ নিধন চলছে। গ্রামীণ হাট বাজার গুলোতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক পোনা মাছে সয়লাব হয়ে যায় সকাল-বিকেল।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এভাবে পোনা মাছ নিধন করায় পরবর্তী সময়ে দেশীয় মাছের অভাব দেখা দেয়। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে অধিকাংশ দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ডিম ছাড়ে। এই সুযোগে কিছু অসাধু মৎস্য চাষী কই, সাটি, শোল, খলিশা, চান্দা, ডারকিনি, পয়া, মলা, ঢেলা ও পুটি সহ দেশি মাছের পোনা শিকার করে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ জলাশায় ও খালবিল গুলোর বৃহতাংশ মাটি ভরাটে সংকুচিত হওয়া, ক্ষতিকর প্রজাতির মৎস্য আহরন, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, দুষিত পানির সংমিশ্রন সহ নানা কারনে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য বিচরনের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। যেটুকু আছে তাও জেলেরা মা প্রজাতির মাছ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক পোনা মাছ সহ সমুলে শিকার করায় বংশ বিস্তার করতে না পেরে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে ।
উপজেলার চাকির পশার বিলের সভাপতি মৎস্যচাষী জোগেন চন্দ্র জানান, রাজারহাট উপজেলা বিভিন্ন জলাশয়, প্লাবন ভূমি, খালবিল ও নদী নালা থেকে পবদা, চিংড়ি, দারকিনি, সোল, বোয়াল, টেংরা, সিং, ভাগন, মলা, ঢেলা, চিতল, সাটি, বাইন, আইড়, খলিশা, চান্দা, ডানকানা, পয়া, পুটি, কৈ, গুজি, আইড়, কুচিয়া সহ দেশীয় মাছ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা সদরের হাড়িডাঙ্গা গ্রামের প্রবীণ মৎস্য জীবি ঠাকুরদাস জানান, একসময় উপজেলার জোকমারীর দোলা, ইটাকুড়ি, হরিশ্বর ওয়াপদ ক্যানেল, ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা, চাকির পশার, খাউড়িয়া, দেউলা, সরলা ও টুপামারী বিল পেশকারের ডারা সহ বিভিন্ন খাল বিল, নদীনালা, জলাশায় ও প্লাবনভূমিতে দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল। স্থানীয় পর্যায়ে এই মাছের চাহিদা মেটানোর পরও অন্যান্য উপজেলা সহ জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করত জেলে সম্প্রদায় গুলো। এখন আর দেশী মাছ বাজারে তেমন পাওয়া যায়না।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ আবুনুর মোঃ আক্তারুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলার সর্বত্র দেশীয় পোনামাছ নিধনের প্রতিযোগীতা চললেও তা দেখার কেউ নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, বিষয়টি জানা ছিল না, এব্যাপারে আমি উপজেলা মৎস্য অফিসারকে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিবো।