রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার জয়, দুপুরের পর বিএনপির অভিযোগ
রংপুর, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : রংপুর সিটি কর্পোরেশনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার দলীয় প্রতীকের ভোটে সদ্য বিদায়ী মেয়র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ১৯৩ কেন্দ্রের সবগুলোর বেসরকারি ফল অনুযায়ী তার প্রাপ্ত ভোট ১,৬০,৪৮৯, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র শরফ উদ্দিন ঝন্টু পেয়েছেন ৬২,৪০০ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছেন ৩৫,১৩৬ ভোট। নির্বাচনে মোট সাতজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করেন, কেবল রংপুরেই নয়, সারা দেশেই লাঙ্গলের জোয়ার বইছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়ের এই ধারা শুরু হল রংপুর দিয়েই। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয় ভোট গণনা। নির্বাচন বিশ্লেষকদের প্রাথমিক ধারণা, প্রায় ৭০ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
নগরীতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। অর্থাত্ প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ভোটার ভোট দিয়েছেন। সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণ ও বাধাহীনভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকালে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া মোস্তাফিজার রহমানের জয়ের খবর আসতে থাকে। সর্বত্রই মেলার আমেজ: সুষ্ঠু ভোট হওয়ায় খুশি রংপুরের মানুষ। সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশনও। দিনভর ছিল উত্সবমুখর পরিবেশ। নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই ভোটে সকালের দিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। রংপুরের ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। দুপুরে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বিকালে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ছিল লম্বা লাইন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোনোরকম কারচুপি বা জালিয়াতির খবর পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল’-এর ডেপুটি চিফ অব পার্টি ব্রায়োন কেটি (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক) বলেন, চমৎকার ভোট হয়েছে, কোথাও সহিংসতা চোখে পড়েনি, মানুষ উৎসবের আমেজে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেছেন, বিশ্লেষক হিসেবে মনে করি, মোটা দাগে এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ হয়েছে। এছাড়া প্রকৃতিও সহায়ক ছিল। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন মোটা দাগে শান্তিপূর্ণ হলেও ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল সাড়ে চারটায় সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মডার্ন পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছে। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে শাহীন নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
তিনি এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, বিকাল চারটার দিকে ভোট গ্রহণ শেষে কাউন্সিলর প্রার্থী শাফিউল আলম শাফির (লাটিম) সমর্থক ভোট কেন্দ্রের ভেতরে যাওয়ার চষ্টো করে। এ সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলম ও জাকারিয়া আলম শিবলুর সমর্থকরা তাকে বাধা দেয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শাহীনকে মারধর করে তারা। পরে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।