মুজিব বর্ষে ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুতের আলো জ্বলবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): সরকার ২০২১ সাল নাগাদ সকল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে সারাদেশের ঘরে ঘরে আলো জ্বালতে সক্ষম হবে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। ইনশাল্লাহ, মুজিব বর্ষ উদযাপনের মধ্যে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হব। কেউ অন্ধকারে থাকবে না, সব ঘরেই আলো জ্বলবে। প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে ৭টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ২৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন এবং উপজেলাগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। পাশাপাশি দেশের ৪৬১টি উপজেলার মধ্যে ২৩৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হলো। আরো ১২৭টি উপজেলায় শিগগিরই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে, যেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, বাকি একশ’ উপজেলায় আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপনকালে বিদ্যুতায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, আলোকিত করাই আমাদের কাজ এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। যেখানে বিদ্যুতের গ্রীড লাইন পৌঁছেনি সেসব প্রত্যন্ত পাহাড়ি, হাওড় এবং চরাঞ্চলে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরকরাহ করে সারাদেশে এই বিদ্যুতায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, বলেন তিনি। তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার তাঁর পরামর্শ পুনর্ব্যক্ত করেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের যে খরচ হয় এর চাইতে অনেক কম অর্থে আমরা তা সরবরাহ করে যাচ্ছি। তিনি এ সময় বিএনপি আমলে দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কথা স্মরণ করিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার দেশে বিদ্যুৎ পেয়েছিল মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট। পরবর্তী ৫ বছরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করে রেখে গেলেও ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পরবর্তী ৫বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন এক মেগাওয়াটও বাড়াতে পারেনি। উপরন্তু, তা কমিয়ে ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নিয়ে আসে। ২০০৯ সালের সরকার গঠনের পর থেকে বিদ্যুৎকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়াসহ একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে তাঁর সরকার বিদ্যুৎকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করবো এই বিদ্যুৎ ব্যবহারে আপনারা সাশ্রয়ী হবেন। বিদ্যুৎ অপচায় যেন না হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে আপনাদের বিদ্যুতের বিলটাও কম আসবে। এই দেশ আমাদের এবং এই দেশের প্রতিটি সম্পদ জনগণের। কাজেই এই সম্পদকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আসুন সকলে মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ডেপুটি স্পিকার ফজলে বাব্বি মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান সরকার গণভবনের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, বেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এখন খাদ্য পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। অর্থাৎ একটা মানুষের জীবনে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ যে মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন হয় সে চাহিদাগুলো সম্পূর্ণভাবে পূরণের কর্মসূচিই আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যার সুফলটা পাচ্ছে দেশের জনগণ। দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই কারণে যে, তারা আমাদের বার বার ভোট দিয়েছেন এবং সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আর সে কারণেই আজকে দেশের উন্নয়নটা আমরা করতে পারছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একশ’ শিল্পাঞ্চল (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) আমরা গড়ে তুলছি। যেখানে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, দেশের চাহিদাও মিটবে এবং বিদেশেও আমরা রপ্তানি করতে পারবো। ফলে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার জন্য চাষের জমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চাষের জমি আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে কারণ আমাদের যে জনসংখ্যা তাদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে চাই। ভিক্ষা চেয়ে, হাত পেতে চলতে চাই না, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে আমরা সরবরাহ করতে চাই। আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। যেটা আমাদের জাতির পিতা শিখিয়ে গেছেন।