মুখগহ্বরের ক্যানসার নিরাময় কি সম্ভব?
স্বাস্থ্য, ১০ মে ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): মুখে দীর্ঘদিন ঘা হয়েছে, ব্যথা নেই, কিন্তু সারছে না, মুখের ভেতরে মাংসপিণ্ড হয়েছে, এগুলো মুখগহ্বরে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
ওরাল ক্যানসার বা মুখগহ্বরের ক্যানসার কী? প্রথমে জানা দরকার ক্যানসার আসলে কী? খুব সহজে বলতে হলে, ক্যানসার হলো কোনও কোষের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা বৃদ্ধি। একটি কোষ থেকে এই রোগের বা বৃদ্ধির সূত্রপাত হয়। কিন্তু সেখানেই তা সীমাবদ্ধ থাকে না। ওই কোষটির পাশাপাশি অন্য কোষগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
শরীরের যে কোনও অংশেই এই ব্যাপারটি ঘটতে পারে। মুখগহ্বরের মধ্যে যখন এই রোগ ছড়ায় তখন তাকে মুখগহ্বরের ক্যানসার বা ওরাল ক্যানসার বলা হয়। মুখগহ্বরের মধ্যে ঠোঁট, জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ি, গলা, চোয়াল, লালাগ্রন্থিসহ যে কোনও জায়গাতেই কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি থেকে ক্যানসার হতে পারে।
রোগটি কতটা উদ্বেগের? প্রথমেই বলা দরকার, যে কোনও রোগই উদ্বেগের। এখন রোগটি যদি ক্যানসার হয় তাহলে তো কথাই নেই। আমাদের দেশে ওরাল ক্যানসার বা মুখগহ্বরের ক্যানসারের হার অন্য নানা ধরনের ক্যানসারের থেকে অনেকটাই বেশি।
দেশের মোট ক্যানসার রোগীর প্রায় এক তৃতীয়াংশই এই ধরনের মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ফলে মুখগহ্বরের ক্যানসার হলে তা সত্যিই খুব উদ্বেগের। তবে একটা আশার কথা বলি। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলেই এই মুখগহ্বরের ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
আসুন জেনে নেই মুখগহ্বরের ক্যানসারের কারণ
তামাকজাত পদার্থঃ মুখগহ্বরের ক্যানসারের পেছনে মূলত দায়ী তামাকজাত পদার্থ ব্যবহার। তামাকজাত পদার্থের ব্যবহার থেকেই এই রোগটি হয় বললে বেশি বাড়িয়ে বলা হয়। বিড়ি, সিগারেট ব্যবহারের জন্যই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগটি হয়।
মদ, গুটকা, সুপারি, পান মসলাঃ মদ, সুপারি, পান মসলা অত্যধিক সেবনেও এই রোগ হতে পারে। যারা মদ্যপান এবং ধূমপান— দুটিই একসঙ্গে করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের আশঙ্কা বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কারণে মুখগহ্বরে ক্যানসার হতে পারে।
মুখগহ্বর পরিষ্কার না করলেঃ নিয়মিত মুখগহ্বর পরিষ্কার না করা মুখগহ্বরে ক্যান্সারে অন্যতম কারণ। আবার অনেক সময়ে দাঁতের ক্ষয় হয়ে দাঁতের প্রান্ত ধারালো হয়ে যায়। সেই ধারালো দাঁতের বারবার ঘর্ষণেও মুখের ভেতর ক্যানসার হতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসঃ মুখের ভেতর দীর্ঘক্ষণ ধরে কোনও কিছু রেখে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, এছাড়া তার মধ্যে তামাকজাত কিছু না থাকলেও এই ধরনের ক্যানসার হতে পারে।
অতিবেগুনি রশ্মিঃ এইচআইভির মতো কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামে একধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, সূর্যালোকে দীর্ঘক্ষণ থাকলে সূর্যের আলোর মধ্যে থাকা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মুখগহ্বরের ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাবার বা অনেক দিনের বাসি খাবার খেলেও মুখের ভেতরে ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে যায়।
মুখে ক্যানসারের চিকিৎসাঃ আগে এ রকম একটা ধারণা ছিল যে, ক্যানসার হলে আর রোগী বাঁচবে না। কিন্তু এখন এই কথাটা আর ঠিক নয়। ক্যানসারের অনেক উন্নত চিকিৎসা বেরিয়েছে, বিশেষ করে মুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে। সেসব চিকিৎসা করলে ক্যানসারের একেবারে নিরাময় সম্ভব। এ রকম অনেক উদাহরণও রয়েছে।
মুখগহ্বরের ক্যানসারের চিকিৎসা কীভাবে হবে, তা নির্ভর করে মূলত ক্যানসার কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জেনে।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ঃ প্রথমে আমরা গ্রেডিং করে দেখে নিই, সেটি কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং শরীরে কতটা ছড়িয়েছে। প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা পড়লে শুধুমাত্র অস্ত্রোপচার করলেই ক্যানসার সেরে যাওয়া সম্ভব। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে অস্ত্রোপচার করার পরে রেডিওথেরাপি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিও করা হয়।
রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপিঃ রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি একসঙ্গে চললে তাকে বলা হয় কেমোরেডিয়েশন। মুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই বেশি কার্যকরী। এ ছাড়া, ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারেও জোর দিতে হয়। কেননা, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক রোগীই মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান। অনেকে মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েন।
রোগীর মনোবল বাড়ানোঃ অনেক রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার হওয়া সত্ত্বেও তারা মারা গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে রোগীকে মনোবল বাড়ানোর জন্য তার পাশে থাকতে হবে। এমন উদাহরণ দিতে হবে, যেখানে কোনও ব্যক্তি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সুন্দর জীবনযাপন করছেন।