বিএনপির ঘাটি বগুড়ায় নেতা শূন্য, গ্রেফতার দু’শতাধিক
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪): বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভুমি ও বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি নেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে গত ৩ দিনে জেলার ১২ উপজেলায় ২ শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ‘সন্ত্রাসী স্টাইলে’ লাঠিসোটা নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া, ভাঙচুর ও মারপিট করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তবে, ভাঙচুর ও মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কোনো না কোনো মামলার আসামী বলে দাবি করেছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সনাতন চক্রবর্তী।
থানা পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সরবরাহ না করায় গ্রেফতারের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে গ্রেফতারের সংখ্যা আরো বেশী।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে জাহিদুর রহমান, আমিনুর রহমান, আহাদ আলী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল হান্নান নামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৬ জন নেতা-কর্মিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সাথে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন, মাঝিড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক খায়রুল বাশার ও বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশীর নামে সন্ত্রাসী স্টাইলে ভাঙচুর ও মারপিট করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। অপরদিকে বুধবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল বাশারের নয়মাইলস্থ বাড়িতেও তল্লাসী চালিয়েছে পুলিশ।
বিএনপি নেতা মিন্টুর বৃদ্ধ বাবা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে ২০-২৫ টি মটরসাইকেল যোগে ৪০-৪৫ জন পুলিশে আসেন। তারা হাতে হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত ভাবে বাড়ির ভিতর প্রবেশের চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে মিন্টুর মা ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে এবং দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। এসময় মিন্টুর এসএসসি পরিক্ষার্থী মেয়েসহ পরিবারের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেনের ভাই জানান, পুলিশ হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত ভাবে তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় পাকঘরের চুলা ও গ্রীলের দরজা ভাঙচুর করে।
শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম ভাঙচুর ও মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আজকের রায়কে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এবং তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জানমাল রক্ষায় পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতির কারনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলেও মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট রাফী পান্না অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে ৩ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ অযথা অন্যায়ভাবে হয়রানি করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।
গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোরশেদ মিল্টন একজন সম্মানিত চেয়ারম্যান। তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাননি নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক, উপজেলা যুবদল সভাপতি, কাহালু উপজেলা বিএনপি সভাপতি এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সনাতন চক্রবর্ত্তী জানান, গত কয়েক দিনে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কোনো না কোনো মামলার আসামী। অন্যায় ভাবে বা হয়রানি করার জন্য কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি বলেও দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।