বাবার কু-কর্মের ফসল দু’মাসের শিশু সন্তান নিয়ে থানায় হাজির মেয়ে
ভোলা প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান শাহিন, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ভোলার চরফ্যাশনে বাবার কু-কর্মের ফসল ২ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে এবার থানায় হাজির হয়েছে আরোও এক মেয়ে। চরফ্যাশন থানা পুলিশ জানিয়েছে, ন্যাক্কার জনক এই ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে। শশীভূষণ থানায় অপর এক কন্যার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় বহুল আলোচিত বাবা আব্দুল জলিল ওরফে ম্যাজিক জলিল ওরফে জহুরী জলিল বর্তমানে জেলে আছে।
গত পরশু শুক্রবার রাতে ভোলার চরফ্যাশন থানায় হাজির হয়ে ভিক্টিম অভিযোগ করেন-৭ বছর আগে চাচাতো ভাইর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের ১৫দিন পর স্বামী ওমান চলে যান। তারপর থেকে আর দেশে ফেরি আসেননি। দীর্ঘদিন স্বামীর অনুপস্থিতির কারণে শাশুড়ির সাথে পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়।
বিরোধের বিষয় বাবা-মাকে জানালে স্বামী সংসার থেকে তাকে (ভিক্টিম) বাবার পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাড়িতে আশ্রয় দেয়া হয়। এই বাড়িতে বাবা-সৎ-মার সংসারে আশ্রিত জীবন শুরু করে ভিক্টিম। ভিক্টিমের আপন মা তার বাবার শশীভূষণ থানার চর কলমী ইউনিয়নের উত্তর মঙ্গল গ্রামের বাড়িতে থাকেন। সৎ-মায়ের সংসারে আশ্রিত থাকা কালে নানান রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে বাবা তার সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক শুরু করে।
বিষয়টি প্রথম দিকেই সৎ-মাকে জানালে তাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য হুমকী ধামকী দেন। পর্যায়ক্রমে ভিক্টিম অন্তঃস্বত্তা হন। অন্তঃস্বত্তা ভিক্টিম প্রথমে হাজারীগঞ্জে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে শ্বশুড়-শাশুড়ির ঘরে ফেরে আসে। এই খানেই বাবাকে ডেকে শ্বশুড়-শাশুড়ি ও নিকটাত্মীয়রা গর্ভের সন্তান অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাবা ২৫ হাজার টাকাসহ ফুফু হাছিনার সঙ্গে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি সরকারি হাসপাতালে সন্তান অপসারণের চেষ্টা করলেও পুলিশী ঝামেলার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকার এক নিকটাত্মীয়র বাড়িতে ভিক্টিমকে রেখে ফুফু হাছিনা চরফ্যাশন চলে আসে।
সন্তান অপসারণের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ওই নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে রেখে ভিক্টিমকে গর্ভের সন্তানসহ হত্যার পরিকল্পনা করে বাবাসহ তার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। এই হত্যার পরিকল্পনা টেরপেয়ে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে ভিক্টিম নারায়নগঞ্জে এক মহিলার কাছে আশ্রয় নেয় এবং ওই মহিলার গৃহপরিচারিকার কাজ করে।
দু’মাস নারায়নগঞ্জের ওই মহিলার আশ্রয়ে থাকা কালে গত ১৫ ডিসেম্বর ভিক্টিম ছেলে সন্তানের জম্ম দেয়। গত শুক্রবার রাতে ওই ছেলে সন্তানকে কোলে নিয়ে নরপশু বাবার বিরুদ্ধে মামলা করতে চরফ্যাশন থানায় আসেন ভিক্টিম। ভিক্টিম জানান-বাবার থেকে হত্যার হুমকীতে আতংকিত হয়ে প্রাণের ভয়ে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
প্রকাশ থাকে যে, ইতিপূর্বে আব্দুল জলিল ওরফে ম্যাজিক জলিল ওরফে জহুরী জলিল-এর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন তার অপর এক মেয়ে। ওই মামলায় জলিল এখন জেলে আছে।
জলিল জেলে আটক হওয়ার পর প্রাাণের ভয়ে ঢাকায় পালিয়ে থাকা মেয়ে মামলা করার নিরাপদ সময় এসেছে ভেবে বাড়ি ফিরে আসে এবং থানায় হাজির হয়েছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চরফ্যাশন থানায় হাজির হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফিন আহমেদ এবং অফিসার ইনচার্জ ম.এনামুল হকের কাছে ঘটনা বর্ননা করেছেন ভিক্টিম।
চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)ম.এনামুল হক জানান, এই ঘটনায় ভিক্টিম নিজেই বাদি হয়ে চরফ্যাশন থানায় মামলা দায়েরে করেছেন।