বগুড়ায় বাবা-মেয়ের মাথার চুল কাটলো গ্রাম্য মোড়লরা
বগুড়া প্রতিনিধি, এম নজরুল ইসলাম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : হিন্দু সম্প্রদায়ের কীর্তনের দুই শিল্পির মাথার চুল কেটে ঘোল ঢেলে দেয়াসহ কীর্তনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য মোড়লদের বিরুদ্ধে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার গ্রামাঞ্চলে সালিসের নামে নারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনৈতিক কার্যকালাপের অপবাদে উপজেলার ৪নং থালতা-মাজগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের কীর্তন শিল্পি নারায়নি দেবীর (২৬) মাথার চুলের অর্ধেকটা কেটে ঘোল ঢেলেছে গ্রাম্য মোড়লরা। গ্রাম্য সালিসের ফতোয়া’য় নারায়নি দেবীর পিতা কীর্তন শিল্পি নরেন চন্দ্র নাথেরও (৫৫) মাথার চুল কেটে ঘোল ঢেলে দিয়েছে। মেয়েকে জন্ম দেয়াই তার অপরাধ। এছাড়াও নির্যাতিত বাবা-মেয়ে কখনো কীর্তন করতে যেতে পারবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফতোয়াবাজরা।
শনিবার বিকালে নির্যাতিত দুই কীর্তন শিল্পি বাবা ও মেয়ে নন্দীগ্রাম থানায় এসে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (নন্দীগ্রাম সার্কেল) মাহবুর রহমান কাজল ও পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নির্যাতিতা নারী নারায়নি দেবী অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা এবং আমি কীর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। কীর্তন করে আমাদের পেট চলে। একসপ্তাহ আগে হঠাতই গ্রাম্য সালিস ডাকে একই গ্রামের মোড়ল ভায়েশ্বর চন্দ্র, জগবন্ধু, প্রফুল্ল চন্দ্র, সুকুমার, গেরা চন্দ্র, হিরন্ন, চঞ্চলসহ ১৫/২০জন গ্রাম্য মাতব্বর। সালিসে আমাকে ও আমার বাবাকে জোর করে হাজির করে। এরপর জামালপুর গ্রামের জনৈক মোকছেদ নামের এক মুসলিম ছেলের সাথে কীর্তন শিল্পি নারায়নি দেবীর অবৈধ কার্যকালাপের অপবাদ দেয় গ্রাম্য মোড়লরা। ফতোয়া দিয়ে নারী কীর্তন শিল্পির মাথার চুল অর্ধেক কেটে দিয়ে ঘোল ঢালা হয়, পরে মেয়ের জন্মদাতা হওয়ায় পিতা নরেন চন্দ্র নাথের মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে গ্রাম ঘুরানো হয়। সমাজে এক ঘরে করার ফতোয়া রেখে নির্যাতিতদের কীর্তনে যাওয়া বন্ধ করার রায় দিয়েছে মোড়লরা। এঘটনার সুবিচার চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলে ঘুরছিল ফতোয়ার শিকার বাবা-মেয়ে। অবশেষে শনিবার বিকালে তারা থানা পুলিশের কাছে গিয়ে সুবিচার দাবি করেন।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল গোপালপুর গ্রামে গিয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, কীর্তন শিল্পি নারয়নি দেবীর সাথে এক মুসলিম ছেলের প্রেমের সম্পর্কের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। কীর্তন করতে বাঁধা দেয়ার কারনে ওই নারী থানায় অভিযোগ দিয়েছে। গ্রাম্য মোড়লরা পালিয়ে যাওয়ায় এঘটনায় কাউকেই আটক করা যায়নি।