বগুড়ায় কলেজছাত্রী ধর্ষনকারী আ.লীগের চেয়ারম্যানের বিচার দাবি মানবাধিকার কমিশনের
বগুড়া জেলা প্রতিবেদক, এম নজরুল ইসলাম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৩নং ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী কর্তৃক দূর্যয়পুর গ্রামের এক কলেজ ছাত্রীকে ও আদমদীঘি উপজেলা সদর ইউনিয়নে সুজন কর্তৃক গোড়গ্রাম গ্রামের শামীমা (১৩) সহ সারাদেশের ধর্ষণ, শিশু, নারী নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সাতমাথায় চত্বরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বগুড়া জেলা শাখার আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানবাধিকার কমিশন বগুড়া জেলা সভাপতি নুরুন নবী বুলু তার বক্তব্যে মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের ধর্ষণ, শিশু, নারী নির্যাতন ও হত্যার দ্রুত ন্যায় বিচার, অপরাধীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি এবং ভিকটিমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে জোরদাবী জানান। অপরাধীরা যেন কোন আইনজীবির আইন সহযোগিতা না পায়’ সেজন্য বিশেষভাবে আইনজীবিদের কাছে অনুরোধ করেন।
বগুড়া জেলা পুলিশের মাধ্যমে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করার দাবী জানিয়ে, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিয়িার কাছে অনুরোধ রাখেন এবং প্রচার-প্রচণার মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান। বক্তব্য রাখেন মোঃ আমিনুল ইসলাম সহ-সভাপতি, মোঃ আবু তাহের সাজু সম্পাদক, রঞ্জু আহমেদ, শাহ আলম, মোঃ শাহজামাল সিরাজী, সভাপতি শেরপুর উপজেলা শাখা। টি এম গফুর সাধারণ সম্পাদক শেরপুর উপজেলা শাখা, আবু জাফর সভাপতি শাজাহানপুর। উক্ত কর্মসূচিতে বগুড়ার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ মিডিয়ার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বগুড়া জেলা শাখার পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শেষ করেন।
এদিকে, নন্দীগ্রাম থানার এসআই মনিরুল ইসলামের সাথে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী ও চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সখ্যতার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর থেকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোরশেদুল বারীর ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী। মামলা তুলে নিতে ওই পরিবারকে হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছে চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা। এছাড়াও চাঁদাবাজির মামলা করে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান বাহিনীর ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে অপর এক পরিবারের।
ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে পলাতক আছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী । পলাতক থাকলেও তার ক্যাডার বাহিনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। ধর্ষিতার পরিবারকে অব্যাহত হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ধর্ষণ মামলার বাদী কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি নেই।
চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে ২০১৬ সালে বসতবাড়ি বিক্রি করে বগুড়া শহরে বসবাস করছেন পণ্ডিতপুকুর বাজার এলাকার বাসিন্দা দিদার মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান দিদার মণ্ডল ও তার ছেলে কলেজ ছাত্র আতিকুর রহমান জনিকে বেদম মারপিট করে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যে হুমকি দেন। জীবন বাচাতে পরিবারকে নিয়ে বসতবাড়ি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে শহরে চলে যান তিনি।
চলতি বছর পণ্ডিতপুকুর হাট সরকারিভাবে ইজারা পায় ওই এলাকার মুনসুর আলীর পুত্র হাসান মাহমুদসহ আরো দুইজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদের নিকট ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। হাসান মাহমুদ চেয়ারম্যানকে ফেব্রুয়ারি মাসে এক লাখ টাকা দেন। অবশিষ্ট ১ লাখ টাকার জন্য চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী ওই মাসের ২৩ তারিখে হাসান মাহমুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে বেদম মারপিট করে এবং হত্যার হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় নন্দীগ্রাম থানায় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন হাসান মাহমুদ। মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী তাকে হত্যার হুমকি দেয়। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৯ মার্চ জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের আবেদন করেন হাসান মাহমুদ। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়।