ফরিদগঞ্জ হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশী

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, কামরুজ্জামান, ১৩ অক্টোবর, ২০২১ (বিডি ক্রাইম নিউজ ২৪) : ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন রোগীর ভীড় লেগেই আছে। উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ৩৯টি কমিউিনিটি ক্লিনিক, ৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল থাকার পরও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারগন রোগীর ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে রোগীদের বেশীরভাগই শিশু। প্রতিদিনিই আট থেকে ১০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়া প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুই জ্বর, সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু ওয়ার্ডের সব গুলো শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে ইতিমধ্যে মহিলা ওয়ার্ড, বারান্দা, করিডোরেও রোগীদের সীটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালের সকল স্থানে রোগীর ভীড় ছিল লক্ষ করার মত।

চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, ক্রমেই শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারনে প্রায় প্রতি ঘরেই সকল বয়সী মানুষ জ¦র, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভীড় করছে। এ ১৩ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল প্রায় ৩০ জন।

এ ছাড়াও রয়েছে ডেঙ্গু, করোনা আক্রান্ত, প্রসূতিসহ বিভিন্ন অনুখে আক্রান্ত রোগী। প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে চারশত এবং করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে আটশত জনকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে। হাসপাতালে ডাক্তার ও সেবীকাসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবল কম থাকায় রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরিফুল ইসলাম নামে জনৈক অভিভাবক তার ১০ মাস বয়সী শিশু মিনহাজকে নিয়ে গত চারদিন ভর্তি আছেন হাসপাতালে। আরিফুল ইসলাম বলেন, বাড়ীতে জ¦র সর্দির চিকিৎসা দিয়ে ভালো না হলে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। সিট খালি না পাওয়ায় শিশুকে ফ্লোরেই রাখতে হয়েছে। গায়ে হালকা জ্বরও ছিল। ওষুধ খাইয়েও সুস্থ হচ্ছিল না।

পরে হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা করার পর বাচ্চার নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্তু কোনো শয্যা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে বিছানা করে থাকতে হচ্ছে। এ রকম অনেকেই রয়েছেন, চিকিৎসার আশায়। রোগীদের অভিযোগ একবারে সাধারন কিছু ঔষধ পাওয়া গেলেও বেশীরভাগ ঔষধ দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা অধিকাংশই করাতে হয় প্রাইভেট ডায়গনষ্টি সেন্টার থেকে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন নরমাল ডেলিভারি সিজার করানো হয়। বিভিন্ন রোগের রক্ত, পশ্রাব, পায়খানা, ডেঙ্গু, করোনাসহ যক্ষা রোগীদের পরীক্ষা করানো হয়। রোগীর চাপ অনেকটা বেড়েছে। হাসপাতাল ৫০শয্যায় উন্নিত হয়েছে, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু লোকবল বাড়েনি। ১০জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও, ২০জন মহিলা ডাক্তারের জায়গায় আছে ৮জন এদের মধ্যে বরাবরই একাধিকজন থাকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। নার্স, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নকর্মীর সংখ্যাও অনেক কম।

বহুবার চাহিদাপত্র দিয়ে চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। ল্যাব অপারেটর তিনজনের মধ্যে আছে একজন, দির্ঘ অনেক বছর যাবৎ পড়ে আছে আধুনিক এক্স-রে মেশিন নেই রেডিওগ্রাফার। একটি ইসিজি মেশিন থাকলেও তা নষ্ট হয়ে নামে মাত্র রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুইজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে এতবড় হাসপাতালের রোগীদের সামাল দেয়া কঠিন। সকাল নয় টা তেকে আড়াই টা পর্যন্ত অন্যান্য ডাক্তারগন দায়িত্বপালন করে চলে যান। কখনও কখনও ইমার্জেন্সিতে এত বেশী রোগীর চাপ তাকে যে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার কুলিয়ে উঠেন না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ওই হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে ৫ হাজার ২৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *